Image description

আগামী দুই মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৫০ শয্যা বিশেষায়িত বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। শনিবার (৬ জুলাই) সকালে চমেক হাসপাতালের গোয়াছি বাগান এলাকায় প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছি। এটা যেহেতু একনেকে পাস হয়ে গেছে আর আমার ইচ্ছা আছে যে প্রধানমন্ত্রী যখন দেশে থাকেন তখনই ওনাকে দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করানোর। প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যাচ্ছেন তাই আশা করি উনি দেশে ফিরে এলে আমরা এটা উদ্বোধন করতে পারব। এ মাসেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার চেষ্টা করব, আর যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করব।
 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চাইনিজরা কমিটেড যে দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করবে। একইসঙ্গে আমরা জনবল যন্ত্রপাতি সব নিয়েই কাজ করছি। আমি যে রকম শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে এক দিনে শুরু করতে পেরেছিলাম, এবারও টার্গেট হচ্ছে আমরা সব কটি একসঙ্গে করে চালু করব। এই বার্ন ইউনিট চালু হলে চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলা উপকৃত হবে। সবাইকে ঢাকা ছুটতে হবে না।’
 
এদিকে চুক্তির ২২ মাসের মধ্যে হাসপাতাল তৈরির কাজ শেষ হলে আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র অনুদান সহায়তা হিসেবে দেবে চীন সরকার। এ ছাড়া এ ইউনিটটি চালু করতে জনবল লাগবে অন্তত ৫০০ জন। তবে এ জনবল অনুমোদনে এখনও কাজ শুরু করেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর।
 
যেমন হবে বিশেষায়িত বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট : ১৫০ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মধ্যে থাকছে শিশুদের জন্য ৫টিসহ মোট ২০টি বার্ন আইসিইউ বেড, ২৫টি এইচডিইউ বেড এবং ৩টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। রোগী আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য থাকবে তিনটি রাস্তা। 

ছয়তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের ইউনিটটির প্রথমতলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি, দ্বিতীয়তলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি), নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয়তলায় হাইডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), চতুর্থ এবং পঞ্চমতলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড, ষষ্ঠতলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে অফিস। এই বার্ন ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৮০ কোটি টাকা। বাকি ১০৫ কোটি টাকা সরকার দেবে। চলতি বছরের ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ–সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
 
এর আগে চীন সরকারের সঙ্গে গত ২০২৩ সালের মার্চে প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়। যেহেতু চীন সরকার এ প্রকল্পে ৬৩ শতাংশ অর্থ অনুদান হিসেবে দিচ্ছে, তাই তাদের নির্বাচিত ঠিকাদারই অবকাঠামো নির্মাণ করবে। অবকাঠামো নির্মাণের যন্ত্রপাতি, প্রকৌশলী ও উপকরণ সরবরাহ করবে দেশটি। প্রকল্প শেষে এক বছর প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেবে তারা। অন্যদিকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ সংযোগসহ বিভিন্ন পরিষেবা দেবে বাংলাদেশ সরকার।
 
২০১২ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬টি শয্যা নিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু করে চমেক হাসপাতাল। এটাকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট বলা হলেও এর অস্তিত্ব নেই হাসপাতালের অর্গানোগ্রামে। এমনকি নেই অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। পরবর্তী সময়ে সরকারের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ আলাদা অবকাঠামোতে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার। 
 
এরপর চীনা প্রতিনিধিদল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করে। এর পরের কয়েক বছরে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা আটকে ছিল স্থান নির্বাচনেই। শেষমেশ ২০২২ সালের মাঝামাঝি চীন সরকার চমেক হাসপাতাল এলাকার গোঁয়াছিবাগান এলাকায় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্র তৈরির স্থান নির্বাচন করে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের জানায়।
 
গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চট্টগ্রামে এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, ভবনের নকশা অনুযায়ী সবকিছু পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই করে চীনা প্রতিনিধিদল। ওই বছরের ৩০ মার্চ এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। 
 
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সফরে এসে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। যদিও মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার আগে থেকে এ বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।