Image description

সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন পদের জন্য যোগ্য প্রার্থী বাছাই করার প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু এই পরীক্ষাগুলো একযোগে একই তারিখে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যার পেছনে আসলে কোন সৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। চাকরি প্রার্থীরা এমনিতেই নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে আজকাল বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা একই সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

যেমন, গত ৩১ মে, ২০২৪ তারিখে ডাক বিভাগ, পেট্রোবাংলা, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ প্রায় ২০টি আলাদা আলাদা সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা নানানভা‌বে ক্ষ‌তিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রথমত, একই তারিখ এবং সময়ে সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার সময়সূচি আগ্রহী আবেদনকারী প্রার্থীদের উল্লেখযোগ্যভাবে অসুবিধায় তথা পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হতে বাধ্য করে। এই পরিস্থিতি তাদেরকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্যে যেকোনো একটা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করে, যার ফলে তাদের বিকল্প পছন্দগুলো সীমিত হয় এবং তাদের কর্মসংস্থান দ্রুত নিশ্চিত করার সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হয়।

ফলস্বরূপ, চাকরি প্রার্থীরা বিশেষ করে কর্মহীন যুবকরা সরকারি চাকরির বিভিন্ন পদে টাকা দিয়ে আবেদন করার পরেও পরীক্ষা দিতে পারে না। দ্বিতীয়ত, একযোগে পরীক্ষা প্রার্থীদের উপর অযথা চাপ সৃষ্টি করে, বিশেষ করে যারা একাধিক সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একাধিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার অর্থ চাকরির বাজারে বিদ্যমান সংকট। আমরা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারি না কোনটা চাকরি আমাদের হবে যেহেতু বিদ্যমান পদের বিপরীতে অসংখ্য ব্যক্তি আবেদন করে।

আবার, আমরা সবাই জানি, ব্যাংক, বিসিএসের সিলেবাস আলাদা, প্রশ্ন প্যাটার্ন আলাদা। সবচেয়ে হাস্যকর কিন্তু মর্মান্তিক বিষয় হচ্ছে কতক চাকরির পরীক্ষার কোনো নির্দিষ্ট সিলেবাস বা বিষয় কিছুই উল্লেখ থাকে না। আবেদন করার পর পরীক্ষা দেয়ার সময় অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে মেরে আসতে হয়। এছাড়াও নিজস্ব অধ্যয়নের সময়সূচি ঠিক রাখা, পরীক্ষার হলে যাওয়া আসা, থাকা খাওয়া (যেহেতু অধিকাংশ পরীক্ষা ঢাকায় হয় এবং চাকরি প্রার্থীদের ঢাকায় আসতে হয়) একটি কঠিন কাজ হয়ে ওঠে। যা তাদের শারীরিক এবং মানসিক ক্লান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এমনিতেই চাকরিপ্রত্যাশী বেকাররা আর্থিকভাবে দুর্বল, তাদেরকে আরও দুর্বল করা হয়। এটি পরীক্ষার সময় নিশ্চিতভাবেই তাদের দক্ষতার উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলে। একই সময়ে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন পরীক্ষার আয়োজক এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চ্যালেঞ্জগুলোকে বাড়িয়ে তুললেও এগুলোকে গণনার মধ্যেই আনা হয় না। অধিকন্তু, একযোগে অনুষ্ঠিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা এবং স্বচ্ছতার বিষয়ে উদ্বেগও বাড়াতে পারে।

চাকরিপ্রার্থীরা পরীক্ষার সময়সূচিকে স্বেচ্ছাচারী বা বৈষম্যমূলক, পক্ষপাতিত্ব বা পক্ষপাতিত্বের সন্দেহ করতেই পারে। এটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রক্রিয়ার সততার উপর আস্থা নষ্ট করতে পারে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের বিশ্বাস ভাঙতে পারে। যদিও একই সাথে সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার উদ্দেশ্য ধরে নিলাম, চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হতে পারে। তারপরেও এটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সামগ্রিক ন্যায্যতার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। নীতিনির্ধারক এবং পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের জন্য বিকল্প সময়সূচি বিবেচনা করা অবশ্যই অপরিহার্য বলে মনে করি।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার তারিখ সমন্বয় করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে যাতে একই তারিখে কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হয়। ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা এবং সমান সুযোগের নীতিগুলোকে সমুন্নত রেখে চাকরি প্রার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া সময়ের দাবি। এতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।

লেখক: প্রভাষক, রসায়ন বিভাগ, নবকুমার ইনস্টিটিউশন

মানবকণ্ঠ/এসআরএস