১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের আত্মদানে আজ আমরা স্বাধীন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অর্ধশত বছর পার করার পরেও মুক্তিযুদ্ধের তালিকা থেকে বিতর্ক শেষ হয়নি। ভুয়া সনদের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণ করে তাদের সুবিধা নিচ্ছে অনেকেই। ফলে জাতির বীর সন্তানদের বিতর্কের মুখে ফেলা হচ্ছে। ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ বিষয়টিই আমাদের জাতির জন্য একটি অসম্মানজনক শব্দ। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মাধ্যমে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। সংসদীয় কমিটির গত ১২ জুনের বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এ অভিযোগ উত্থাপন করেন কমিটির সদস্য ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। গত বুধবার কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এটি তুলে ধরা হয়। ওই বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকী অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, জামুকা ২০১৭ সালে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নের পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১৬ সালের তালিকায় যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, এখন দেখা যাচ্ছে, তারাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছেন। এদের কেউ কেউ জামুকার সঙ্গে সম্পর্ক করে ভুয়া সনদ তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ হচ্ছে না বলে জানান তিনি। এ সময় মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন লতিফ সিদ্দিকী। বৈঠকে কমিটির আরেক সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান স্বাধীনতার এত বছর পরে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি সহজ নয় বলে মন্তব্য করেন। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের অন্যতম শাজাহান খান বলেন, যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে, ‘আমরা তাদের চিনি না।’ জামুকাকে আরও স্বচ্ছ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেন শাজাহান খান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ওই মুক্তিযোদ্ধার অবদান এবং নেতৃত্ব বিবেচনায় রেখে নির্বাচন করলে কাজটি যথাযথ হবে। মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে যেসব ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট, শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস রয়েছে, সেসব সঠিকভাবে তুলে ধরা এবং সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেয়া হয়। বর্তমানে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকারের উচ্চপদে আছেন। তাদের পরামর্শও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার পথকে আরো সহজ করবে। অন্যদিকে ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাথা’ প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংগ্রহ করে নতুন প্রজšে§র কাছে তুলে ধরতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বীর গাথাকে তুলে ধরবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরদের এই অবদান দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে এর অবদান অনস্বীকার্য।
জামুকার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ তুলেছেন- তারা সবাই এদেশের বীর সন্তান। এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অনাকাক্সিক্ষত বলে মনে করি। একই সঙ্গে প্রত্যেকটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে মূল মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে আসল মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ের সময় এখনও আছে। এটা বাছাই করে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটা তালিকা করা মনে হয় এখনও সম্ভব। নয় মাসব্যাপী একটি জনযুদ্ধের গণযোদ্ধাদের তালিকায় প্রশ্নবোধক থাকতে পারে না। এখনও যেসব বীরযোদ্ধারা বেঁচে আছেন তারা জানেন কারা যুদ্ধ করেছে, কারা করেনি, কারা সনদ জোগাড় করে মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। যারা সনদ কিনে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম লিখিয়েছে তাদের নাম এলাকাবাসী জানে। কারণ এখনও অনেক মানুষ আছে যারা কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধকে দেখেছে। তাই নির্মোহভাবে যাচাই-বাছাই করে দেশের বীর সন্তানদের একটি বিতর্কহীন তালিকা পরবর্তী প্রজন্মের ইতিহাস চর্চার জন্য একান্ত জরুরি।
মানবকণ্ঠ/এসআরএস
Comments