Image description

বেশিরভাগে নামের পাশে ঝুলছে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ। তাও একে একে মুক্তি পাচ্ছেন ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। এরইমধ্যে ৬ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা ছাড়া পাওয়ায় অপরাধ বাড়বে, অবনতি হতে পারে আইনশৃঙ্খলার ব্যবস্থার। অবশ্য, কারা কর্তৃপক্ষের দাবি—নিয়ম মেনেই ছাড়া পাচ্ছেন আসামিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজধানীর অন্তত ছয়জন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিলেন। এখনো কারাগারে আছেন এমন সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ মুক্তির জন্য জোর তদবির করছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, সরকার ঘোষিত বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে বড় অংশই এখন দেশের বাইরে। মারা গেছেন কেউ কেউ। তাদের বাইরে যারা কারাগারে আছেন, তাদের বেশির ভাগই দু–একটি মামলা ছাড়া অন্যগুলোয় খালাস পেয়ে কিংবা জামিন নিয়ে কারাগারে অবস্থান করছিলেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এখন তারা জামিনে বের হয়ে আসছেন।

ইতিমধ্যে জামিনে মুক্ত হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খাতায় ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী, তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, হাজারীবাগ এলাকার সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন। এ ছাড়া ঢাকার অপরাধজগতের আরও দুই নাম খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসুও কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম প্রকাশ করে। তাতে আব্বাস, হেলাল, টিটন ও রাসুর নাম ছিল। এই চারজনসহ জামিনে বের হওয়া প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ অনেক মামলা রয়েছে। কোনো কোনো মামলায় তাদের সাজাও হয়। আবার কোনো কোনো মামলায় উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতিও পান কেউ কেউ। সুইডেন আসলামসহ কয়েকজনের ক্ষেত্রে অব্যাহতি পাওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল না করার ঘটনাও রয়েছে।

শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কীভাবে জামিন পাচ্ছেন, এ বিষয়ে গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বড় অপরাধীদের মামলা, জামিন, গ্রেফতার ও সামগ্রিক কার্যক্রমের ওপর পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সব সময় নজরদারি করত। সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা খুব সহজেই বের হয়ে আসছেন। আবার বের হওয়ার পর তাদের ওপর কোনো নজরদারি নেই।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এখন সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায়। এ কারণে কারাগারে থাকা অবস্থায় কিংবা জামিনের পর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দিকে আলাদাভাবে নজর দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেই সুযোগে তারা এভাবে বের হতে পারছে।’

ঢাকার অপরাধ জগত নিয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে জামিনে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। মিরপুর এলাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসী কারাগার থেকে বের হয়ে নেপালে পাড়ি জমিয়েছেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে। কেউ আবার পুরোনো রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আশায় আছেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকের সঙ্গে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কারও কারও সখ্য হয়েছে। সেই সুযোগও কাজে লাগাতে চাচ্ছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জামিনে বের হয়ে কেউ যেন নতুন করে অপরাধমূলক কাজে জড়াতে না পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে আমাদের কঠোর নজরদারি থাকবে। শীর্ষ সন্ত্রাসী, গডফাদার বা যেকোনো পরিচয়েই হোক, অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে থেকেই বাইরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাই জামিনে মুক্ত হলে তাঁদের অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘জামিনে বের হওয়া সন্ত্রাসীরা আবার পুরোনো অপরাধের নেটওয়ার্ক সচল করছেন কি না, সে বিষয়ে কঠোর নজদারি করা প্রয়োজন। তা না হলে ছাত্র–জনতার নতুন বাংলাদেশের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি নষ্ট হবে।’