Image description

১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে মামুন নামে একজনকে পিটিয়ে মারা হয়। এ ঘটনা ঘিরে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি। এর জের ধরে প্রাণ হারান চার পাহাড়ি। তাদের কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে, কেউ মারা যান গণপিটুনিতে। 

২০ সেপ্টেম্বর নিহত হন রাঙামাটির অনিক। জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয় থেকে ২০০ গজের মধ্যেই দক্ষিণ কালিন্দীপুর সড়কের প্রবেশমুখ। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের সঙ্গে লাগোয়া একটি চায়ের দোকানে বসে ছিল অনিক চাকমা। ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১২টা পেরোলো কেবল। হঠাৎ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দেখে দোকান থেকে বের হয়ে আসে সে। রাস্তায় আসতেই কয়েক যুবক তাকে ঘিরে ধরে। অনিকের কলার ধরে তারা মারতে থাকে কিল-ঘুসি। ৫-৬ সেকেন্ডের মধ্যেই লাঠি হাতে সেখানে চলে আসে আরও ১৫ থেকে ২০ জন। তারা এসেই লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে অনিককে। মাত্র ১২ সেকেন্ডের গণপিটুনিতে তারা থামিয়ে দেয় ১৭ বছর বয়সী অনিকের জীবন। 

গণমাধ্যমের হাতে আসা ৩ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে এমন নৃশংসতার চিত্র। ওই ভিডিওটিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে খুনিদের মুখ। এদের মধ্যে একজন ইসরাত হাসান শুভ। আরেকজনের নাম জাহাঙ্গীর বলে নিশ্চিত হয়েছেন স্থানীয়রা। তবে ঘটনার ছয় দিন পরও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

শুধু রাঙামাটির অনিক নয়; এমন নৃশংসতার শিকার হয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতেও মারা গেছেন তিনজন। তারা হলেন জুনান চাকমা, রুবেল ত্রিপুরা ও ধনঞ্জয় চাকমা।

অনিকের বাড়ি রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের দুর্গম নোয়াদাম গ্রামে। সেখানেই কাটে তার শৈশব। ২০২৩ সালে অনিক এসএসসি পাস করে। অনিকের বাবা জুম চাষ করে অভাব অনটনের সংসার চালান। দুই ভাইয়ের মধ্যে অনিক সবার ছোট। এ বছর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী সরকারি ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছিল সে। অনিকের বড় ভাই কিশোর কুমার চাকমা জানান, অনিক ছিল শান্তশিষ্ট। তার গিটারিস্ট হওয়ার স্বপ্ন ছিল।

কিছু দিন আগে অনিক তার ভাই কিশোর কুমারকে ফোনে জানিয়েছিল, পরিবারের হাল ধরবে সে। ঘরের অভাব অনটন ও দুঃখ দূর করবে। কিন্তু সেই অনিকই এখন দূর আকাশের তারা।

অনিকের বাবা আদর সেন চাকমা জানান, অনিক কলেজের পাশে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। অভাব অনটনের সংসারের কারণে দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে অনিককে কষ্ট করে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন তিনি। অনিককে ঘিরেই সব স্বপ্ন ছিল তাঁর। এটা যারা শেষ করে দিয়েছে তাদের বিচার চান অনিকের বাবা। তিনি বলেন, ‘ভিডিওতে খুনিদের মুখ দেখা যাচ্ছে। আমার ছেলেকে তারা যেভাবে মেরেছে এভাবে মানুষ গরু-ছাগলকেও মারে না। ছেলেকে তো আর পাব না; পুলিশ যদি হত্যাকারীদের অন্তত গ্রেপ্তার করে মনে একটু শান্তি পাব।’

রুবেল ত্রিপুরার ভাই দীর্ঘমুনি ত্রিপুরা জানান, তাঁর ভাই রাজমিস্ত্রী ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি সকালে কাজ করতে গিয়েছিলেন। স্বনির্ভর বাজারে রাতের দিকে গুলির শব্দ শুনেছেন তারা। পর দিন ভোরে এলাকার মানুষের কাছ থেকে জানতে পারেন তাঁর ভাই গুলিতে মারা গেছেন। ঘটনার পর দিন খাগড়াছড়িতে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এসেছিলেন। তাঁর কাছে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন বলে জানিয়েছেন রুবেল ত্রিপুরার ভাই দীর্ঘমুনি ত্রিপুরা

পানছড়ি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন জুনান চাকমা। তাঁর মা রুপসী চাকমা বলেন, ঘটনার দিন আমার দুই ছেলেই বাড়িতে ছিল। রাতে একসঙ্গে খেয়েছি। খাবার খেয়ে জুনান ১১টার দিকে স্বনির্ভর বাজারের দিকে যায়। সেখানে অনেক লোকজন ছিল। রাত ১২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করলে জুনান গুলিবিদ্ধ হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখেন জুনান আর নেই।

মানবকণ্ঠ/এফআই