Image description

বাজারে সপ্তাহখানেক আগেও কাঁচা মরিচ কেনা যেত ১৮০-২২০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু কয়কদিনের টানা বৃষ্টির মধ্যে বাড়তে থাকে মরিচের দাম। রোববার (৬ অক্টোবর) খুচরা বাজারে ঘুরে দেখা গেছে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। অন্যদিকে এক পিছ ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।

শুধু মরিচ আর ডিম নয়, বাজারে বেড়েছে সকল সবজির দামও। চলতি সপ্তাহে সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আজ রোববার রাজধানীর মিরপুর ১, ৬, ১১ নম্বর, ১২ নম্বরের মুসলিম বাজার, কালশী, খিলক্ষেত ও মালিবাগ বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

বর্তমানে বাজারে আমদানি করা ও দেশীয়—উভয় ধরনের কাঁচা মরিচই বিক্রি হচ্ছে। গরম, বন্যা বা অতিবৃষ্টির কারণে গত তিন-চার মাসে বাজারে বেশ কয়েকবার মরিচের দাম ওঠানামা করেছে। তবে বেশির ভাগ সময় ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে কাঁচা মরিচ। গত সপ্তাহেও ১৮০-২২০ টাকা দরে মরিচ বিক্রি হয়েছে। এরপর টানা বৃষ্টিতে ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার বাজারে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে ৫০০ টাকায় পৌঁছায়। তবে আজ কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমে ৩৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে সবজির দামও বেশ চড়া। ৮০ টাকার নিচে নেই কোনো সবজি। ফলে বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। আজ বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে বরবটি কেনা যেত ৮০-১২০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু আজ বাজারভেদে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকায়। বেগুনের দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা দরে। টমেটো, পটোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, করলা, ঢ্যাঁড়স, লাউসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে।

বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম এখনো চড়া। আজ বড় বাজারগুলোয় এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৭০-১৭৫ টাকা দরে। পাড়া-মহল্লায় এই দাম ১৮০ টাকা বা তারও বেশি। সেই হিসাবে প্রতি পিছ ডিমের দাম হয় ১৫ টাকা। একই দরে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগির সাদা ডিমের দাম।

বাজারে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। আজ প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০-২১০ টাকা দরে। গতকাল শনিবারও ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগি। গত সপ্তাহেও এর দাম ছিল ১০-২০ টাকা কম। সোনালি মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ২৬০-২৮০ টাকা দরে।

ব্রয়লার মুরগির দাম হঠাৎ কেন বাড়লো এই প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিভাবেই দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কেনা সম্ভব হলে সেটি খুচরা বাজারে প্রয়োগ করা সম্ভব হতো। কিন্তু পাইকারিতেই বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

ফখরুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, কেউ যদি একসঙ্গে অনেক মুরগি নেয় তবে দাম কিছু ছেড়ে দেওয়া সম্ভব। এছাড়া খুচরা একটি বা দুটি মুরগি কিনলে দাম কমানো যাচ্ছে না। এতে করে আমাদেরই লস হয়ে যায়। এই মুরগি পাইকারি মার্কেট থেকে কেনার পর আবার দোকানে নিয়ে আসার জন্য আলাদা পরিবহন খরচ আছে। সব মিলিয়ে ১০ টাকা ন্যূনতম লাভ না করলে আমাদের চলে না।

এদিকে মুরগি ও ডিমের বাড়তি দামের কারণে ক্রেতারা পড়েছেন বেশ বিপাকে। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। বিক্রেতারা যেমন ইচ্ছা তেমন দাম নিচ্ছেন। এগুলো দেখার কেউ নেই।

খিলক্ষেত বাজারের এক ক্রেতা বলেন, বিক্রেতাদের বাহানার অভাব নেই। প্রতিটি জিনিসের দাম অনেক বেশি। ১৫ টাকা দিয়ে একটি ডিম কিনতে হচ্ছে। আমরা কোথায় যাবো? সরকারের উচিত এসব বিষয়ে কঠোরভাবে মনিটরিং করা। কেননা সাধারণ মানুষ খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে।

সালাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, গত কয়েকদিন আগেও ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজি কিনেছি। আর আজকে এই মুরগি ২০০-২১০ টাকা দাম বলছে। এরমধ্যে এমন কি হয়েছে যে, ২০-৩০ টাকা দাম বাড়াতে হবে? ডিম আর মুরগির দাম বেঁধে দেওয়ার পর আরও বেশি বেড়েছে। তাহলে লাভ কী হলো?

এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চিঠিতে মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। কেজিপ্রতি সোনালী মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। আর কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস