Image description

শিক্ষার্থীদের শনি কাটছে না। করোনাকালীন সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই দেশের পট পরিবর্তনে তারা ক্ষতির কবলে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘অটোপাস’র সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গতকাল সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফল প্রকাশ করা হয়। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার কিছু বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় সেগুলোতে ‘অটোপাস’ পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসএসসিতে ওই বিষয়ে পাওয়া নম্বরই এইচএসসিতে পরীক্ষা না দিয়েই পেয়ে গেছেন তারা। সিলেট বোর্ড বাদে বাকি শিক্ষা বোর্ডগুলোতে মাত্র ছয়টি বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাতিল হয়েছে ব্যবহারিক পরীক্ষাও। ফলে সবার প্রত্যাশা ছিল এবার পাসের হারে ‘বড় লাফ’ দেখা যাবে। অথচ ঘটেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। 

গতবছর সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরও যে গড় পাসের হার ছিল, এবার তা আরও কমেছে। এ বছর ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সেই হিসেবে এবার পাসের হার কমেছে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ কম। যদিও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৫৩ হাজার বেড়েছে। এবার সারা দেশে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ বাড়লেও সার্বিক ফলাফল নিম্নমুখী। প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের মোট সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে হয়। তার মধ্যে চারটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। বাকি তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা সবারই বাতিল হয়েছে। অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ইংরেজি ও আইসিটির মতো আবশ্যিক বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ফেলের হার বেশি। যে বোর্ডগুলোতে এ দুটি বিষয়ে বেশি ফেল করেছে, সেখানে পাসের হারও কমেছে। এতে নিম্নমুখী হয়েছে গড় পাসের হার। তবে ফলাফল খারাপের পেছনে ছাত্র আন্দোলনের প্রভাবও রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসিতে পাসের হারে এবার সবার নিচে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। প্রায় একই রকম পাসের হার যশোর বোর্ডেও। কাছাকাছি অবস্থানে চট্টগ্রাম বোর্ডও। অন্য বোর্ডগুলোর তুলনায় এ তিনটি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার তুলনামূলক অনেক কম, যার প্রভাব পড়েছে গড় পাসের হারেও। মূলত ইংরেজিতে বেশি ফেল করায় এ দুটি বোর্ডে ফল বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। 

শিক্ষা গবেষকরা এমন আভাস আগেই দিয়েছিলেন। শুধু ফলাফল খারাপ নয়-সম্পূর্ণ পরীক্ষা নেয়া ছাড়া এভাবে ফলাফল ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারেই দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষার সর্বস্তরে এমনকি কর্মজীবনে প্রবেশেও জটিলতা তৈরি হবে। ফলাফলের চিত্র দেখে অনুমান করা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে, এটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। যারা গত দুই বছর ধরে পড়াশোনা করল, তার কোনো মূল্যায়ন না রেখে চার বছর আগে একজন শিক্ষার্থী কী করেছে, তা টেনে এনে এইচএসসির মূল্যায়নের মানদণ্ড করা কতটা মানানসই। শুধু মূল্যায়নই নয়, এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে উচ্চশিক্ষায়। উচ্চ মাধ্যমিকে যেসব বিষয় পড়ানো হয়, তার অনেকাংশ কাজে লাগে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়। 

অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পঠিত বিষয়গুলো নির্দিষ্ট করে ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতায় দেখা হয়। ঠিক এসব বিষয় কীভাবে নির্ধারিত হবে, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ধরন কেমন হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। এসব পরিষ্কার করে নীতিমালা প্রণয়ন না করলে জটিলতা আরো বাড়বে। বরাবরের মতো শিক্ষার্থীদের কাছে কঠিন বিষয় হিসাবে চিহ্নিত ইংরেজি। যাদের এসএসসিতে এ বিষয়ে খারাপ ছিল তাদের এইচএসসিতে ফলাফল খারাপ হয়েছে। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফলাফলের ওপর। এ ফলের মধ্য দিয়ে প্রকাশ হয়েছে সবাই ভালো করতে পারেনি। পরীক্ষায় সবার ভালো ফল হওয়ার কথাও নয়। 

যারা  অকৃতকার্য হয়েছে তাদের নবোদ্যমে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে, যাদের ফলাফলে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি তাদের সামনে ভালো করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এবারে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী পাস করেছে এখন তাদের উচ্চশিক্ষার জায়গাটা ঠিক হওয়াটা জরুরি। পাস-ফেলের চেয়ে বড় কথা অংশগ্রহণ করা। তারপরও যারা অকৃতকার্য হয়েছে তারা নবোদ্যমে আবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে- আবার ভালো ফল করবে এটাই স্বাভাবিক। এই প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা শিক্ষার্থীদের ভেতর থাকলে তারা ভালো করবেই। শিক্ষায় হতোদ্যম হওয়ার কিছু নেই। এই শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে- এ প্রত্যাশা দেশবাসীর সঙ্গে আমাদেরও।