Image description

সিলেটের ভোলাগঞ্জ, জাফলং ও বিছানাকান্দিতে চলছে বালু ও পাথর লুটপাটের মহোৎসব। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই তিন স্পট থেকে প্রায় দেড় শ কোটি টাকার বালু ও পাথর লুট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব লুটপাট বন্ধে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি দানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা)। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাথে সাথেই আওয়ামী লীগ নেতাদের জায়গায় কোয়ারির দখল নিয়েছেন বিএনপি নেতারা। যদিও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দলীয় পদ স্থগিত করেছে জেলা বিএনপি। তবে এরই মধ্যে লুট হয়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার বালু-পাথর।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোলাগঞ্জের ধলাই নদের পাশেই সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র। এর বিভিন্ন অংশ এবং সংরক্ষিত এলাকা থেকে বালু ও পাথর তুলছেন শ্রমিকেরা। একই দৃশ্য জাফলং ও বিছানাকান্দিতেও। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিককে দেখে একদল পালিয়ে গেলেও, আরেক দল আসে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিতে। এ সময় তারা নানান হুমকি-ধামকি দেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এসব কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

এক পাথর ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাংকারের প্রায় কয়েক শ কোটি টাকার পাথর নিয়া গেছে। এভাবেই লুটপাট চলছেই।’

স্থানীয়রা জানান, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের অনুসারী স্থানীয় ১০ নেতা ও তাদের সমর্থকেরা এসব কাজে জড়িত। এরই মধ্যে রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে।

প্রশাসনের হিসাবে, ৫ আগস্টের পর দুই সপ্তাহে জাফলং ও ভোলাগঞ্জ থেকে প্রায় ১৪০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। নজরদারির কারণে এখন তা কমেছে বলে দাবি জেলা প্রশাসকের।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে ১০ লাখ ঘনফুট বালু, ৬৫ হাজার ঘনফুট পাথর ও অসংখ্য বারকি নৌকা জব্দ হয়েছে। 

সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের কোনো কোনো নেতা-কর্মীও জড়িয়ে যাচ্ছেন। দলের সম্মান ক্ষুণ্ন করার ক্ষেত্রে, যেকোনো পর্যায়ের নেতা হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রশাসনের নজরদারির অভাবে বালু-পাথর লুটপাট করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বেলার।

বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা বলেন, ‘এই সরকারের বা কর্তৃপক্ষের যতটুকু কঠোর হওয়ার প্রয়োজন ছিল, সে ধরনের কোনো অবস্থানে যেতে আমরা দেখিনি। আমরা আশা করি এই অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ করার জন্য কর্তৃপক্ষ তাড়াতাড়িভাবে যেন একটা পদক্ষেপ নেয়।’ 

জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘যারা জড়িত, তাদের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে, তাদের তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। আর যদি দেখা যায় তারা কেউ (উপস্থিত) নেই, তবে তাদের পরিবেশ অধিদপ্তর ও অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।’