Image description

আবারো বড় দরপতন দেখা গেছে দেশের দুই শেয়ার বাজারে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক কমেছে ৫৫ দশমিক এক নয় পয়েন্ট। এই নিয়ে টানা দুই কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১২৭ পয়েন্ট। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে সূচক কমেছে ১৯৯ পয়েন্ট।

বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে থেকেই নেতিবাচক ছিল ঢাকার শেয়ার বাজার। প্রথম ৫ মিনিটে সূচক কমে ৭ পয়েন্ট। দিনশেষে ডিএসইএক্স সূচক ৫৫ দশমিক এক নয় পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১১৪ পয়েন্টে। 

সূচকর সঙ্গে কমেছে লেনদেনও। এসময়, মোট লেনদেন হয় ৩০৬ কোটি ১ লাখ টাকা। আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে ১৫ কোটি টাকা। হাতবদলে অংশ নেওয়া ৩৯৫ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর হারিয়েছে ২৭২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। বেড়েছে ৮৩টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর। 

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করা নিয়ে আস্থাহীনতায় ভুগছেন। তাই বিনিয়োগে আস্থা না হারানোর আহ্বান জানান তিনি।

সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকায় প্রথম গ্রামীণফোন, দ্বিতীয় পূবালী ব্যাংক, তৃতীয় অবস্থানে লাভেলো। শতাংশের দিক থেকে দর বৃদ্ধির তালিকায় প্রথম রানার অটোমোবাইলস, দ্বিতীয় পূবালী ব্যাংক, তৃতীয় অবস্থানে ওয়াইম্যাক্স। এদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক সূচক কমেছে ১৯৯ দশমিক মাত শূন্য পয়েন্ট। লেনদেন ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার।

এদিকে, পুঁজিবাজারে দরপতনে এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্জিন ঋণ। এতে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী। এখনো প্রতিনিয়ত ফোর্সড সেল আতঙ্কে দিন কাটছে ঋণ নেয়া অনেক বিনিয়োগকারীর। ব্রোকারেজ হাউজগুলো বলছে, ব্যাপক দরপতনে বাধ্য হয়েই এ কাজ করছেন তারা। ক্ষতি এড়াতে ফোর্সড সেল না করার পরামর্শ নিয়ন্তক সংস্থা-বিএসইসির।

সাজিয়া আফরিন। ২০১০ সাল থেকে পুঁজিবাজারের একজন সক্রিয় বিনিয়োগকারী। এখনো মতিঝিলের একটি ব্রোকারেজ হাউজে নিয়মিত শেয়ার ব্যবসা করছেন তিনি। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাও কাজে আসেনি তাঁর। দরপতনে পুঁজি হারিয়েছেন কোটি টাকার উপরে।

আফরিন বলেন, ‘আমি স্বামীর কাছ থেকে ৫০ লাখ আর ৭০ লাখ টাকা ঋণ করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করি, ভাই-বোনের কাছে থেকে নিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকাা বিনিয়োগ করি। আমার সব টাকায় শেষ। শেষে আমি মার্জিন ঋণ নিয়েও ফোর্সড সেল হয়।’ 

পুঁজি না থাকায় মার্জিন ঋণ নিয়ে নতুন করে বিনিয়োগ করেন তিনি। শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় আয়ের চেয়ে ঋণের সুদ বেড়ে যায় তার। এক সময় ফোর্সড সেলের শিকার হন তিনি।

আফরিন বলেন, ‘এখন আমার সবার কথায় শুনতে হয়। শেয়ার বাজার আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। এখন মৃত্যু ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।’  

গত দুই মাসে শেয়ারবাজারে পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের কাছে এখন নতুন আতঙ্ক ফোর্সড সেল। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে বিনিয়োগকারীদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই।

ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের জন্য বেড়েছে পুঁজিবাজারে মার্জিন ঋণের সুদ হারও। বর্তমানে ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। 

স্টারলিং স্টকের সিইও সালামুল লতিফ চৌধুরী বলেন, ‘আমরাও ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। আর ১০ শতাংশ গেলেই নেগেটিভ হয়ে যাবে তখন বাধ্য হয়ে সেল করে দেয়।’

বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা আশা করবো যে বিনিয়োগকারীরা যেন ফোর্সড সেলের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’

ঝুঁকি এড়াতে বিনিয়োগকারী সহ সব পক্ষকে মার্জিন ঋণ বিধিমালা মেনে চলার পরামর্শ বিএসইসির। 

মানবকণ্ঠ/এসআরএস