Image description

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) নামে-বেনামে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক গোপন অনুসন্ধানে এই খোঁজ পাওয়া যায়। দুদক লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের ব্যাপারে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

লোটাস কামালের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে দুদকে। প্রকাশ্য অনুসন্ধানে নামে-বেনামে তাঁর সম্পদ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন দুদক কর্মকর্তারা। দুদকের একটি বিশেষ টিম লোটাস কামাল ও পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান করছে। 

দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন লোটাস কামাল। কমিশন বাণিজ্য ও অনিয়ম-দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। দেশে-বিদেশে তাঁর সম্পদ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে প্রাথমিক গোপন অনুসন্ধানে নাম-বেনামে তার পাঁচশ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হলে লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।

দুদকের গোপন অনুসন্ধান অনুযায়ী, ঢাকার নিকুঞ্জে জোয়ারসাহারায় রয়েছে আধুনিক বাণিজ্যিক ভবন ‘লোটাস কামাল টাওয়ার’। বাড্ডা ও উত্তরায় রয়েছে তাঁর বহুতল বাড়ি ও দামি ফ্ল্যাট। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে শেয়ারবাজারে। ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রমাণ মিলেছে সঞ্চয়পত্রে। লোটাস কামাল প্রপার্টিজ ও অরবিটাল এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন লোটাস কামাল। এ ছাড়া, স্ত্রী কাশমেরী কামালের নামে ঢাকার গুলশান, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্লট-ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় তাঁর নিজের ও স্ত্রীর নামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ জমি। স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে নগদ অর্থ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারেও বিনিয়োগ রয়েছে কাশমেরী কামালের। লোটাস কামাল প্রপার্টিজ ও  সৌদি বাংলাদেশ কন্ট্রাকটিং কোম্পানিসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন কাশমেরী। তাঁর সঞ্চয়পত্র রয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকার। তিনটি দামি গাড়ির মালিক তিনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লোটাস কামালের প্রায় ৮০ কোটি টাকা থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। আয়কর নথিতে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম দেখিয়েছেন তিনি। 
লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ খুঁজতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, রাজউক, ঢাকা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর, রেজিস্ট্রার অফিস এবং ভূমি অফিসে চিঠি দিয়েছে দুদক। 

সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত দেড় বছরে তাঁর যৌথ মালিকানার রিক্রুটিং এজেন্সি সাড়ে ৪ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক বিদেশে পাঠিয়েছে। এতে ২৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হওয়ার কথা থাকলেও অতিরিক্ত অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। ওই শ্রমিকদের অনেকেই আবার প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। মালয়েশিয়ার একটি প্রতারক সিন্ডিকেটের সঙ্গে লোটাস কামালের রিক্রুটিং এজেন্সির যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা যায়।