গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিগত সরকারের পতনের পর মুক্তি পায় দেশের মানুষ। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষেই গত ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পট-পরিবর্তনের পর অনেক কিছুই পরিবর্তন চলে আসে। জনগণের প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই।
দীর্ঘ পৌনে ১৮ বছর ধরে গণতন্ত্রপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা ওয়ান-ইলেভেন ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ আমলে নিগৃহীত হয়েছেন। ভুগেছেন মামলা-হামলা, জেল-জুলুমসহ নানা সংকটে। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষিত হলে কর্মীরা উজ্জীবিত এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম গুছিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ হবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, নির্বাচন তাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ মাঠে সক্রিয় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ হলে অনেক সংশয়ের অবসান হবে। গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তাই নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।
তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি বাস্তবায়নযোগ্য রোডম্যাপ জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের পথে হাঁটছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের জন্য অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে দেশে নির্বাচনী অভিযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার সকালে এই কমিটি গঠনের আগাম খবর জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন- ‘আমাদের সরকারের নির্বাচনমুখী প্রক্রিয়া গ্রহণ করার যে কাজ, সেটা শুরু হয়ে গেছে। আপনারা বলতে পারেন নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে।’ জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নিশ্চয়ই ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করতে যে সার্চ কমিটি করা হচ্ছে, তারা আগের মতো পক্ষপাতিত্ব করবে কি না? অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, যেহেতু এবারে সার্চ কমিটি কোনো দলীয় সরকারে অধীনে হচ্ছে না, ফলে নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে। এসব দিকে লক্ষ রেখেই নির্বাচনের পথে হাঁটতে হবে সরকারের। তবে নানা কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা সরকারের চ্যালেঞ্জ। সবার প্রত্যাশা অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে একটি ভালো জায়গায় নিয়ে গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে। শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থাশীল। তবে তাদের শঙ্কা, পতিত সরকারের দোসররা অপপ্রচারের সুযোগ নেবে। নির্বাচনী রোডম্যাপ সরকারের পেছনে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন জোরদারে অবদান রাখবে। সংস্কার যেহেতু একটি চলমান প্রক্রিয়া, সেহেতু নির্বাচনের পরও যাতে তা অব্যাহত থাকে সে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠাও সহজতর হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী নির্বাচনের প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। এই ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ মুহূর্তে দেশটা এমনভাবে বিনির্মাণ করবেন যাতে মানুষ গণতন্ত্রের সাধ গ্রহণ করতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পূর্বের সরকারের দুর্নীতির খাতগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সংস্কার করবেন এবং ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ করে দেবেন। নীতি কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচন হোক- এমন প্রত্যাশা সবার।
Comments