ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ নিহত হয়নি বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ী মোড়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমাদেরও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। কারণ ৫ আগস্ট ঘটনায় পুলিশের অনেক থানায় বুলেটপ্রুফ হেলমেট-জ্যাকেট নেই, পর্যাপ্ত সাপোর্ট পুলিশের এ মুহূর্তে নেই। সীমিত সাপোর্ট দিয়ে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডিসি ছালেহ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য আছেন। সবার সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আহত-নিহতের ঘটনায় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নিহতের কোনো সংবাদ আমরা এখনো পায়নি। তবে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের শিক্ষক ও স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
ওয়ারী বিভাগের ডিসি ছালেহ উদ্দিন বলেন, ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ, আমরা কেউ চায় না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হোক। এক কলেজ আরেক কলেজের সঙ্গে মারপিট হোক আমরা তা চায় না। আমি সবার প্রতি আকুল আবেদ আপানদের সন্তানদের বাসায় রাখুন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে দুই ঘণ্টার সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, বিকেল সোয়া ৪টা নাগাদ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৩০ জনকে আহতাবস্থায় আনা হয়, যার মধ্যে দুই-তিনজন চালক ও পথচারী আছে।
তাদের মধ্যে পরিচয় পাওয়া কয়েকজন হলেন- সোহরাওয়ার্দী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের রাজীব (১৯) ও দ্বিতীয় বর্ষের শাহেদুল (২০), কবি নজরুল সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের রানা (২০), মারুফ (১৯), রুমান (১৯), হাসিনুর (১৯), আরাফাত (১৯); একই কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের অনুপম দাস (২৩) ও দ্বিতীয় বর্ষের সুমন (২২) এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ হাতিরঝিল শাখার উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের হুমায়ুন (২০)।
কবি নজরুল ইসলাম সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শরীফ হোসেন বলেন, তাদের কলেজের ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে আহত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছে সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজের অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পরিচয় পাওয়া কয়েকজন হলেন- নাইম (২০), সিয়াম (১৯), মোল্লা সোহাগ (১৮), রাজিম (১৭), শরিফুল (১৭), জাহিদ (২৫), মোস্তফা (২৩), রাতুল (২১), শফিকুল ইসলাম (২৬), মেহেদী হাসান (২৪), সজীব বেপারী (২৮), ফয়সাল (১৯), সাগর (২১), ইমন (২৪), সিয়াম (১৮)।
ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন আহত ব্যক্তি এসেছেন আমাদের কাছে। এদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর।
পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারের মৃত্যুর ঘটনায় রোববার ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সেই ‘সুপার সানডে’ কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গণ্ডগোলের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ওই হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে সোমবার ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচির ডাক দেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের সামনে আসেন।
এসময় নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডেমরা সড়ক সংলগ্ন মোল্লা কলেজে হামলা চালায়। এসময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
Comments