চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের ৬ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই কারখানায় অন্তত ১২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। এই বন্ধের নোটিশ দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শ্রমিকেরা। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও কারখানা চালু হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের মানবসম্পদ ও প্রশাসনের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের স্বাক্ষর করা বন্ধের নোটিশ টাঙানো হয়।
এতে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনিবার্য কারণবশত আগামীকাল (বুধবার) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারখানাগুলো বন্ধ থাকবে। তবে কারখানার নিরাপত্তা, সরবরাহ ও জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে।
বন্ধ ঘোষণা করা ৬ কারখানা হলো- এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড (নফ), এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড ও ইনফিনিটি সি আর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এর মধ্যে দুটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কালারপুল, তিনটি ইছানগর ও একটি বাঁশখালীতে অবস্থিত।
বেলা সাড়ে তিনটার সময় কালারপুল এলাকায় এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক শ্রমিক কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করছিলেন। তারা আকস্মিক নোটিশে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় পরিবার–পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়ার কথা বলেন।
ভেতরে যেতে চাইলে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের নিরাপত্তা পরিদর্শক পরিচয়ে মোহাম্মদ ইউনুস নামের একজন বলেন, ভেতরে কথা বলার মতো কোনো কর্মকর্তা নেই, তাই ভেতরে যাওয়া যাবে না।
তবে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের উৎপাদন ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দীন বলেন, আমাদের কারখানায় সবকিছু স্বাভাবিক চললেও আকস্মিক ছুটির নোটিশ দেয়া হলো। কোন কারণে সাধারণ ছুটি দিয়ে দিল, জানি না। আমরা এ পরিস্থিতিতে আকাশ থেকে পড়লাম।
এস আলম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ব্যাংকের সহযোগিতা না পাওয়ায় কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। কাঁচামাল আমদানি করা না গেলে কারখানা চালু করার সুযোগ নেই। এ জন্য সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয়। এরপর আরও একাধিক ব্যাংক ও বিমা দখল করে নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়। পাশাপাশি গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ অনুমোদন করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংক এস আলম মুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হলো ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
এর আগে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংক দখল করার পর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা ‘অন্তত’ ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বের করে নিয়েছেন ।
মানবকণ্ঠ/এসআরএস
Comments