ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে এদেশে ‘গণঅভ্যুত্থান’ ঘটেছে। সরকারের উদ্যোগে দেশে সংস্কার চলছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছে না। রাজধানীর সড়কের শৃঙ্খলা না থাকায় এবং দেখভালের সংকটে যানজট নিরসন হচ্ছে না। উল্টো পথে যানবাহন চলাচল, ফুটপাতে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল থেমে নেই। আইনের তোয়াক্কা করছেন না কেউ। পথচারীরাও বেপরোয়া। ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও তা ব্যবহার করছেন না অনেকেই। ফলে তৈরি হচ্ছে যানজট। ফলে নগরবাসীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। যানজটের কবলে পড়ে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমছে। আর এতে জাতীয় অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ যানজট। রাজধানীর এমন চিত্র প্রতিদিনের।
সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়িকে ভিন্ন গতিতে চলতে বলা হয়েছে। লেনভিত্তিক গতি আলাদা করা হয়নি। ফলে সড়কে এখনও ফেরেনি শৃঙ্খলা। খেয়াল-খুশিমতো চলছে গাড়ি, বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা। রাজধানী ঢাকার ফ্লাইওভারগুলোতে এখন দিন-দুপুরেই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যানগাড়ি চলছে। আগে অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চললেও এখন কোনোকিছু তোয়াক্কা না করেই মূল সড়কে যাত্রী বহন করছে তারা। মোড়ে মোড়ে মোটরসাইকেল চালকরা যাত্রী তুলতে জটলা করছেন। বাসচালকরা আগের মতোই বাসস্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রী তোলা ও নামিয়ে দেয়ার পরিবর্তে যখন তখন রাস্তার মাঝেই যাত্রী নামাচ্ছে ও উঠাচ্ছে। যানবাহনগুলোর গতিও বিপজ্জনক। শহরজুড়ে বিশৃঙ্খলায় বিরক্ত যাত্রীরা। কিন্তু যে ট্রাফিক পুলিশের সড়কের এ বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ছিল- তাদেরও আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে না ফলে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা ঘটছে, অন্যদিকে শহরে আগের তুলনায় বেড়েছে যানজট।
এ অবস্থায়, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এখন সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। সড়কে নৈরাজ্যের বিষয়টি বহুল আলোচিত। দেশে সড়কে আইন মানার প্রবণতা নেই বললেই চলে। সড়কজুড়ে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা। পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের অদক্ষতা ও পেশাদারি মনোভাবের অভাব। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন হলে সড়কে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরবে। আমরা মনে করি, এই আইন বাস্তবায়ন করতে হলে মূলে হাত দিতে হবে। বিআরটিএকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা বদলসহ বিভিন্ন কাজে বিআরটিএর শরণাপন্ন হতে হয়। বিআরটিএর সহযোগিতায় অসংখ্য চালক ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে রাস্তায় নামছে। বিআরটিএতে চোখের দেখায় ফিটনেস দেয়া বন্ধ করতে হবে।
সর্বোপরি, ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন জরুরি। রাজধানীতে লাখ লাখ রিকশা চলছে। অবাধে রিকশা ছেড়ে দিয়ে আধুনিক নগরী চিন্তা করা যায় না। অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখল করে রাস্তা সংকীর্ণ করা থেকে জনগণকে বিরত রাখতে হবে। নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য দরকার সরকার ও জনগণের ইতিবাচক চিন্তা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথোপযুক্ত বাস্তবায়ন। পাশাপাশি জনগণকেও ট্রাফিক আইন ও রাস্তায় নিরাপদে চলাচলের লক্ষ্যে প্রণীত আইন-কানুন যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। নগরবাসীকে যানজটের এই মহাদুর্ভোগ থেকে স্বস্তি দিতে সবার আগে জরুরি প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকেন্দ্রীকরণ। এ ছাড়া গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনা অতি জরুরি।
Comments