খবরের পাতায় চোখ রাখতেই নিয়মিত শিরোনামে আসছে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যের খবর। বিগত মাসগুলোর রেকর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে শহর থেকে গ্রাম প্রায় সব জায়গায় আতঙ্কের বার্তা ছিনতাইয়ের খবর। ছিনতাইকারী গ্রুপগুলো শুধু তাদের শক্তির জানান দিচ্ছে না বরং রীতিমতো নিয়মিত শিরোনামে এসে সাধারণ মানুষকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন। দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ নানানভাবে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে লুটে নিচ্ছে সাথে থাকা মুঠোফোন, অর্থ এবং প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্ড ও নথিপত্র। তাদের বাধা দেয়ার সাহস করলে ধারালো অস্ত্রের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে।
দিন যাচ্ছে, ছিনতাইকারীদের ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে, একরকম সংশয় নিয়ে দিনযাপন করছেন সাধারণ মানুষেরা। গত ২৬ নভেম্বর আমার সাথে ঘটে যাওয়া ছিনতাইয়ের বর্ণনা করছি- প্রতিদিনের ন্যায় অফিস যেতে সকালবেলা বের হয়ে রিকশায় উঠি। কিছুদূর যেতেই মোটরসাইকেল দিয়ে গতিরোধ করে তিনজন ছিনতাইকারী। তাদের সবার হাতেই ধারালো চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র। গতিরোধ করে প্রথমেই এসে কোপ দেয়। কাছে ব্যাগ থাকায় তৎক্ষণাৎ ব্যাগ দিয়ে কোপ ঠেকাতে পারলেও পরবর্তীতে মেরে যা কিছু সাথে ছিল সব নিয়ে যায়। রাস্তায় অল্প লোক থাকলেও কেউ বাঁচাতে আসার সাহস দেখায়নি। ঘটনাস্থল ধানমণ্ডি স্টার কাবাবের পেছনের গলি। শহরের মধ্যে এমন জায়গায় ছিনতাই হতে পারে প্রথমে শুনলে সবার অবাক হবারই কথা।
কিন্তু বাস্তবতা বড়ই নির্মমতার সাক্ষী হয়েছে। এরই কিছুদিন আগে আমার অফিস কলিগের সাথে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে। অফিসে আসার সময়ই তাকে আক্রমণ করা হয়, তার ভাই সাথে থাকায় প্রতিরোধ করতে গেলে তাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। খবরের পাতা উল্টোতেই বড় অক্ষরের শিরোনাম নিয়মিত নজর কাড়ছে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যের এমন অনেক খবর। আবার অধিকাংশ মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হয়েও ভয়ের কারণে তা প্রকাশ করতেও পারছেন না।
তাহলে কোথায় আছে এর প্রতিকার? কোথায় মিলবে সমাধান? কারাই বা দিবে মালামাল কিংবা জীবনের নিরাপত্তা? তিক্ত হলেও সত্যি রাস্তায় বের হয়ে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল চোখে পড়ে না বললেই চলে। রাস্তায় চেকপোস্ট নেই, ওলিতে-গলিতে টহল নেই। বর্তমান এমন ক্রান্তিলগ্নে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। ছিনতাইকারীদের চ্যালেঞ্জ তাহলে শুধুই কি সাধারণ মানুষের জন্য নাকি তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তাদের শক্তির জানান দিচ্ছে! আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ঢেলে সাজালে এমন দৃশ্য হয়তো আমাদের দেখতে হতো না। প্রতিটি রাস্তায় টহল জোরদার করা হলে অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় বের হওয়া অপরাধীদের জন্যও এতোটা সহজ হতো না। আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকলে অপরাধীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি হওয়ার আশঙ্কা থাকতো না। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করলে অপরাধ করে অপরাধী পার পেত না। রাস্তার পাশে রোড লাইটগুলো নষ্ট অবস্থায় পড়ে থাকায় অন্ধকারে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সেগুলো মেরামত করে সিসি ক্যামেরার মনিটরিং বাড়াতে হবে।
নজরদারি থাকলে কোনো না কোনো রাস্তায় অপরাধী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়বেই। অপরাধীরা আর যাইহোক দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার চেয়ে বেশি শক্তিশালী নয়, প্রয়োজন যথাযথ নজরদারি, বাড়তি টহল, আইনের প্রয়োগ। ছিনতাইকারীদের এই দৌরাত্ম্য বন্ধে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এর পরিণাম এর চেয়েও কতটা ভয়াবহ হতে পারে আমাদের জানা নেই। সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব বলে দেয় অপরাধীরা কতটা আগ্রাসী রূপে অপরাধ কর্মকাণ্ড করেই চলেছে। আদৌও কী মিলবে প্রতিকার? তবে কী সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতাই তাদের শক্তি সঞ্চয়ের উৎস?
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
Comments