তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা কর্মসূচি ঘোষণা
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে আগামী ৭ দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ১৭-১৮ সেশনের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান এবং ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মোশাররফ রাব্বি প্রমুখ।
তিতুমীর কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানান ,দীর্ঘ ২৭ বছরের আন্দোলনে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে যে, স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবি সম্পূর্ণ যৌক্তিক এবং সময়ের দাবি। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, তিতুমীর কলেজের অবকাঠামোগত অবস্থান, পরিবহন ব্যবস্থা, এছাড়াও বলছেন বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে রাজধানীর এই সরকারি তিতুমীর কলেজে।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা আরও জানান, উপমহাদেশের প্রথম শহীদ নেতা বীর মীর নিসার আলী তিতুমীরের নামে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষার্থীদের বিদ্যাপীঠকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় ভাবে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি দিয়ে চলমান শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।
আগামী ৭ দিনের কর্মসূচি সমূহু হল- ১২-১৫ জানুয়ারি সকল তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা এই ৪ দিন প্রধান উপদেষ্টার কাছে খোলা চিঠি লেখবে হ্যাশট্যাগ তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। বিগত দিনে ছাত্রসমাজ প্রতিবাদের কৌশল হিসেবে এ এক আলাদা নজির স্থাপন করতে যাচ্ছে বলে জানান তারা। ১৬ জানুয়ারিতে তাহবান্দ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হলো।
১৭-১৮ জানুয়ারি ভয়েজ অব তিতুমীর ঘোষণা দেয়া হল। এছাড়াও যদি মন্ত্রণালয় এই ৭ দিনের মধ্যে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়কে রাষ্ট্রীয় ভাবে জাতির উদ্দেশ্যে স্বীকৃতও না দেয় তাহলে ১৯ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আবারো ‘ক্লোজ ডাউন তিতুমীর’ ঘোষণা দেয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান তারা।
জিন্নাহ থেকে তিতুমীর কলেজ: সংগ্রামে কিংবা সংকটে সর্বদাই শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান যে শিক্ষা কমিশন প্রনয়ণ করা হয়েছিল তাতে বাংলা শিক্ষাকে অত্যন্ত খাটো করা থেকে শুরু করে এই কমিশন গণবিরোধী রিপোর্ট প্রণয়ন করত । ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন মহলের কাছে এই কমিশন গ্রহণযোগ্যতা হারায়। অচিরেই এর বিরুদ্ধে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। আন্দোলনরত ছাত্র সমাজকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান সিদ্ধান্ত নিলেন জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি শাখাকে স্থানান্তর করা হবে।
সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬৮ সালে মহাখালীর ডিআইটি খাদ্য গুদাম হিসেবে পরিচিত একটি ভবনে জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি শাখাকে স্থানান্তর করা হয়। পাকিস্তানের গভর্নর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নামে এর নামকরণ হয় জিন্নাহ কলেজ।
১ মার্চ ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি স্থগিত করার সংবাদে ছাত্রজনতা ফুঁসে উঠে। তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদস্বরূপ জিন্নাহ কলেজের শিক্ষার্থীরা জিন্নাহ কলেজের নামের সাইনবোর্ডটি নামিয়ে ফেলে। পরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে তিতুমীর কলেজ রাখা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরমধ্যে একটি কলেজ হচ্ছে সরকারি তিতুমীর কলেজ। অধিভুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত এই কলেজের একাডেমিক সকল কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। এর আগে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল।
Comments