Image description

'এখানে ঘুঘু ডাকে অপরাহ্ণে শান্তি আসে মানুষের মনে' জীবনানন্দের সেই কবিতার ছবিই যেন ছিল ঝালকাটির কাঠালিয়া উপজেলার গ্রামাঞ্চলগুলো। অপরাহ্ণে যখন সূর্য অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নিত, তখন ঘুঘুর ডাক মানুষের মনে ছড়িয়ে দিত শান্তির ছোঁয়া। জীবনানন্দের কবিতার চিত্র বাস্তব রূপ পেত এই গ্রামগুলিতে। কিন্তু আজকাল এই মধুর সুরটি যেন হারিয়ে গেছে।নিরাপদ আবাসস্থলের অভাব, খাদ্য সংকট, অবাধ শিকার এবং রাসায়নিক কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ঘুঘু পাখির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

ধানের খেত, ঝোপ-ঝাড়, বাগান—এসবেই ছিল ঘুঘুর আনাগোনা। কিন্তু আজকাল এসব জায়গায় ঘুঘু পাখি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ধান ছাড়াও ঘাসের বিচি, শস্যদানা, গাছের কুঁড়ি খেয়ে ঘুঘুরা দিন কাটাত। বছরে তিনবার করে ডিম পাড়ত ও বাচ্চা ফোটাত। কিন্তু আজকাল এই প্রাকৃতিক চক্রটিও ব্যাহত হয়েছে।

রাসায়নিক কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করেছে। ফলে ঘুঘুরা বিষক্রিয়াতেও মারা যাচ্ছে। আবার আবাসস্থলের ক্ষতির ফলে ঘুঘুদের থাকার জায়গা কমে গেছে। অবাধ শিকারের কারণেও ঘুঘুর সংখ্যা দিন দিন কমছে।

স্থানীয়রা জানান, এক সময়ে কাঠালিয়া উপজেলার দক্ষিণ চেচঁরী, মহিষকান্দি, তারাবুনিয়া, হেতালবুনিয়া, মশাবুনিয়া, আমরিবুনিয়া, বড় কাঠালিয়া, আউরা, শৌলজালিয়া, আওরাবুনিয়া, ও জাঙ্গালিয়া গ্রামের মাঠে, গাছের ডালে ঘুঘু পাখির দেখা মিললেও এখন এ পাখির দেখা পাওয়াই দুরূহ হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত শিকারিদের হাতে ধরা পড়া ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে অত্যন্ত ভীতু ও লাজুক প্রকৃতির ঘুঘু  হারিয়ে যেতে বসেছে। 

বর্তমানে বাংলাদেশে ৬ টি প্রজাতির ঘুঘু পাওয়া গেলেও, তিলা ঘুঘু ছাড়া অন্য ৫ টি প্রজাতির ঘুঘু খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে। ঘুঘু পাখির হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, অতিমাত্রায় শব্দ দূষণ, বনজঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে বসত বাড়ি ও কলকারখানা স্থাপন। 

কাঠালিয়া সদর ফাজিল মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মো. নুর-ই- আলম ছিদ্দীকী বলেন, কালের বিবর্তনে ঘুঘু পাখি অন্যান্য সব পশুপাখির মতো বিলুপ্ত হতে বসেছে। একসময় আমাদের দেশের বনে জঙ্গলে, শহরে, গ্রামে সব জায়গায় এই পাখি প্রচুর দেখা গেলেও বর্তমানে খুবই কম দেখা যায়। বিভিন্ন কারণে ঘুঘু পাখি দিন দিন কমে যাচ্ছে। শিকারি কর্তৃক ঘুঘু শিকার এর একটি অন্যতম কারণ। অনেকে শখের বশে বন্দুক দিয়ে এই পাখি শিকার করে থাকেন। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। এছাড়াও ঘুঘু পাখি ঝোপ ঝাড়ে ও ছোট গাছে এবং মানুষের বসত বাড়ির আশেপাশে বাসা বানায়। এজন্য মানুষজন সহজেই ঘুঘু শিকার করতে পারে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান বিন ইসলাম বলেন, ঘুঘু আমাদের অতি উপকারী একটি পাখি। ঘুঘু পাখির অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই পাখি ফসলের ক্ষেত থেকে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও ফড়িং শিকার করে খায়। এতে ফসল ভালো হয়। কৃষকও আর্থিক ভাবে লাভবান হয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মিশ্রিত খাবার খেয়ে পাখির সংখ্যা ও ডিম পাড়ার পরিমাণ কমে যাওয়া, ঝোপ-ঝাড় ও গাছপালা কেটে ফেলায় নিরাপদ আবাসস্থলের অভাব, নির্বিচারে শিকার করা সহ বিভিন্ন কারণে ঘুঘু পাখি বর্তমানে বিলুপ্ত হতে চলেছে।

কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ঘুঘু পাখি রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ঘুঘু পাখি একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

মানবকণ্ঠ/এসআর