ঝালকাঠির সদর উপজেলার নথুল্লাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আটজন ছাত্রীকে বেত্রাঘাতের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেনকে বেধড়ক পিটুনি দিয়েছে উত্তেজিত এলাকাবাসী। এসময় এই শিক্ষকের কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করান তারা । বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার দিকে নথুল্লাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রধান শিক্ষককে বরিশাল শের -ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপি–সমর্থিত নেতা–কর্মীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জেল হোসনের বিরোধ চলছিল। কমিটির সাবেক সদস্যরা আওয়ামীপন্থি থাকায় তাঁরা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেন। তাই জেলা প্রশাসন ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস নতুন করে কমিটি করার নির্দেশনা দেয়। প্রধান শিক্ষক আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে সভাপতির নাম প্রস্তাব করে জেলা প্রশাসকের কাছে সম্প্রতি কমিটি দাখিল করে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবী আল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। বুধবার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমানের কাছে ছাত্র ও অভিভাবকেরা একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে প্রধান শিক্ষক কিছুটা ক্ষুব্ধ হন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ছাত্রীদের অংশগ্রহণে নাচ-গানের মহড়া চলছিল। দুপুরে প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জেল হোসেন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নাচের মহড়ায় ভুল করার অজুহাতে আটজন ছাত্রীকে বেত দিয়ে পেটান। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কয়েকজন ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে শিক্ষার্থীদের চিৎকার শুনে অভিভাবক ও এলাকাবাসী ছুটে আসেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে প্রধান শিক্ষক নিজের কক্ষ বন্ধ করে বসে থাকেন।
এদিকে ঘটনা জানতে পেরে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম ও থানা থেকে পুলিশ ছুটে আসে। পরে প্রধানশিক্ষক নিজ কক্ষ থেকে বের হতেই উপস্থিত লোকজন তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম তাঁকে নিজের গাড়িতে তুলে নেন। পরে জনতা তাঁর গাড়ি অবরুদ্ধ করে প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।
আহত সাত শিক্ষার্থী ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। তারা সবাই সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছাত্রী। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুলতানা সোনিয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গেছে। ওদের প্যানিক কেটে গেলে সুস্থ হয়ে যাবে।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির আহত ছাত্রী জান্নাতী বেগম বলে, আমাদের নাচের মহড়া চলা অবস্থায় প্রধান শিক্ষক স্যার ভুল হওয়ার অজুহাতে হঠাৎ বেত দিয়ে পেটানো শুরু করেন। এতে অনেক ছাত্রী আহত হয়। অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন,ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানবকণ্ঠ/এসআর
Comments