লালমাথা কুচকুচি, অপূর্ব এক পাখির নাম। পাখিটির মাথা থেকে পেট পর্যন্ত রয়েছে গাঢ় লাল রঙের উপস্থিতি। পাখিটি কুচকুচিয়া বা কুচকুইচ্যা, লালমাথা ট্রোগন বা বাংলাদেশি ট্রোগন নামেও পরিচিত।
শান্ত ও লাজুক প্রকৃতির এই পাখির দেখা মিলেছে খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের মাটিরাঙার পিটাছড়ার বনে। লালমাথা কুচকুচি পাখিটির ইংরেজি নাম Red-headed Trogon; বৈজ্ঞানিক নাম Harpactes Erythrocephalus।
প্রায় তিন বছর প্রচেষ্টার পর ‘অতি দুর্লভ’ পাখির দেখা পেয়েছেন সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী সমির মল্লিক। সমির মল্লিক বলেন, ‘পাহাড়ে পাখি ও বন্যপ্রাণীর ছবি তোলার কারণে প্রায় জঙ্গলে ঘুরে বেড়াই। তবে লালমাথা কুচকুচির দেখা পাওয়া যায়নি। তবে এবার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় পুরুষ ও স্ত্রী পাখি উভয়ের দেখা পেয়েছি।’
পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে বনে একজোড়া লালমাথা কুচকুচির দেখা মিলছে। তিন বছর আগে প্রথমবারের মতো ট্রোগনের দেখা মিলেছে। এরপর প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে ট্রোগন দেখা যায়। তবে বর্ষায় ঘন জঙ্গলের কারণে দেখা যায় না। এখানে অন্তত দুই জোড়া ট্রোগন রয়েছে। এই বনে শিকার নিষিদ্ধের ফলে পাখি ও বন্য প্রাণীর বিচরণও বেশি।’
সমির মল্লিক জানান, এই পাখিগুলো সাধারণত ঘনপ্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বন ও মিশ্র বাঁশবনে বিচরণ করে। পাহাড়ি বনভূমিতেই এরা বাস করে। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাইরে লালমাথা কুচকুচি দেখা যায় না। এপ্রিল থেকে জুলাই এদের প্রজননকাল। এ সময় ঘন বনে গাছের কোঠরে বা কাঠঠোকরার শূন্য গর্তে বাসা করে। বাসায় ৩-৪টি ডিম পাড়ে। পাখিগুলোর দৈর্ঘ্য ৩৫ সেন্টিমিটার, লেজ ১৯ দশমিক ২ সেন্টিমিটার।
পুরুষ কুচকুচির চেহারা স্ত্রী কুচকুচির থেকে কিছুটা আলাদা। পুরুষ কুচকুচির মাথা, ঘাড়, গলা ও বুক সিঁদুরে লাল। পেটের দিকের বাকি অংশ উজ্জ্বল গোলাপি। বুকের লাল ও গোলাপির মাঝখানে একটি সাদা অর্ধবলয় থাকে। লেজ ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া। পিঠ থেকে লেজ হালকা দারুচিনি বা মরচে-বাদামি রঙের। ঠোঁটের কোণা, পা ও পায়ের পাতা বেগুনি। ঠোঁটের ওপরের পাটি বেগুনি-নীল ও নিচের পাটি কালো বর্ণের। স্ত্রী কুচকুচির সারা শরীর দারুচিনি রঙের।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুসারে এই দুর্লভ আবাসিক পাখিটির প্রজাতি সংরক্ষিত।
Comments