রাত যত গভীর হয়, ততই রাজধানী হয় অনিরাপদ। বেড়ে যায় চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ও খুনের মতো নানা অপরাধ। এসব চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন অনেকেই। ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনাও। রাত বাড়ার সাথে সাথে অশান্ত হয়ে উঠছে রাজধানী। ফলে জনমনে তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক। পুলিশ কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত তৎপরতা না থাকায় রাতের ঢাকায় অনিরাপদ বোধ করছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রাতের ঢাকা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ এবং সড়ক দুর্ঘটনা।
সাম্প্রতিক সময়ে রাতের যানবাহনই হয়ে উঠছে যেন সাক্ষাৎ যমদূত। এমন চিত্র সারা দেশে আইনশৃৃঙ্খলার অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে- এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিগত সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার করা হয়। এ সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার করবে বলে কথা দিয়েছিল। কিন্তু কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই। সরকার পতনের পর থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন সাতজন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না বলেই অপরাধী চক্র সুযোগ নিচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার নগরবাসীকে আশ্বস্ত করলেও বাস্তব পরিস্থিতি দেখে নাগরিকদের শঙ্কা কাটছে না।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর বিতর্কিত ভ‚মিকার জন্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে পুলিশ। গা-বাঁচিয়ে চলতে হয় তাদের। এই সুযোগটাই নিতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে পেশাদার দুর্বৃত্তরা। পুলিশ বলছে- তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলোয় বিশেষ সতর্কতামূলক টহল বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে র্যাবও। কিন্তু রাজধানীর অপরাধের চিত্র দেখে এমনটা মনে হচ্ছে না। বাস্তবতা পুরোই ভিন্ন।
অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণেও কিছু মানুষ চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইসহ অপরাধে সম্পৃক্ত হতে পারে। এই সামগ্রিক বিষয় বাস্তবতায়, শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশে আইনশৃৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর নৈতিক মনোবল, দৃঢ়তা ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা সবচেয়ে জরুরি। পেশাদারি ত্বরিত তৎপরতা এবং সততা-নিষ্ঠা-দায়িত্বশীলতায় সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী দিনরাত সক্রিয় থাকলে, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ হতে বাধ্য। দুঃখজনক হলেও সত্য- সরকারি আমলা ও পুলিশ বাহিনীকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলেও জননিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সন্তোষজনক নয়।
জননিরাপত্তার বিষয়ে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের ঘাটতি রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের নিরাপত্তা না থাকলে যতই সংস্কার করা হোক না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না। রাতের ঢাকায় দুর্বৃত্তরা একের পর এক অপরাধ ও খুন-খারাবি করে যাবে, তা দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে না, তা কাম্য হতে পারে না। রাজধানীসহ সারাদেশে অপরাধচক্রের দৌরাত্ম্য নির্মূল এবং রাতের শহরে মানুষের অবাধ ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই রাতের ঢাকাকে নিরাপদ করতে হবে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে, এজন্য নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
Comments