Image description

জনাকীর্ণ এই শহরটির বাতাসের মান ধীরে ধীরে খারাপই হচ্ছে। বাতাসের মানোন্নয়নে কোনো সুখবরও দিতে পারছে না সরকার। চলতি বছরের শুরুতেই টানা কয়েক দিন বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সকালেও বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা।

বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার থেকে এ তথ্য জানা যায়।

২৯৫ স্কোর নিয়ে আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা, যা এখানকার বাতাসের মান নাগরিকদের জন্য ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’। একই সময়ে ২৩৭ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের শহর লাহোর।

১৯৪ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের শহর কলকাতা। যা এখানকার বাতাসের মান নাগরিকদের জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাবে, ‘ঢাকায় বর্তমান জনসংখ্যা দুই কোটি ৪৬ লাখের বেশি।’ ইআইইউ গ্লোবাল লাইভেবিলিটি ইনডেক্স ২০২৪ অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসের অনুপযোগী শহরের একটি ঢাকা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভেরও পরে ঢাকার অবস্থান।

দূষিত শহরের তালিকায় আজ ঢাকার পরেই রয়েছে ভারতের দিল্লি, পাকিস্তানের লাহোর ও উজবেকিস্তানের তাসখন্দ শহর। তাদের একিউআই স্কোর যথাক্রমে ১৯৫, ১৭৮ ও ১৭২।

যখন কণা দূষণের একিউআই মান ৫০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকে তখন বায়ুর গুণমানকে ‘মাঝারি’ বলে বিবেচনা করা হয়। একিউআই সূচক ১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় সাধারণত সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়, ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। এছাড়া ৩০১ এর বেশি হলে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।

বাংলাদেশে একিউআই সূচক পাঁচটি দূষণের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলো হলো-বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় জর্জরিত। এর বায়ুর গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণে কারণে প্রধানত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বাড়ে।

গেল ২৯ জানুয়ারি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

তিনি বলেন, বায়ুদূষণ কমানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, যা অর্থনৈতিক সক্ষমতা, উন্নয়নের ধরন, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। জ্বালানির মান উন্নয়ন ও রিফাইনারির সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে দূষণ কমানো সম্ভব নয়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রিফাইনারি উন্নত হওয়ার পরও দূষিত শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে। তাই বাংলাদেশকেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

রিজওয়ানা আরও বলেন, আমাদের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে বাইরের দেশ থেকে এবং ২৮ শতাংশ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণে সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকা জরুরি।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস