![Image description](https://manage.manobkantha.com/files/img/202502/677887bc54da1874cd27f52565a21e2e.jpg)
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ইছামতী নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি অভিযোগ উঠেছে। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে শতাধিক কৃষকের কৃষি জমির সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন জানার পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্থানীয় সুশীল সমাজ ও কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের উত্তর রাঙ্গামালিয়া গ্রামের কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইছামতী নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপর গ্রামের ফসলি জমিতে ২টি ভেকু মেশিন বসিয়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। এতে ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে আশপাশের বেশ কয়েকটি ফসলি জমি।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, কৃষিকাজই তাঁদের প্রধান পেশা। এতেই তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু মাটিখেকো ইটভাটার মালিকেরা কৃষকদের রুটি রুজিতে আঘাত করছেন। তাঁরা যেভাবে কৃষিজমি নষ্ট করছেন, তাতে কিছুদিন পর আর জমি খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রশাসন যদি এখনই কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।
উত্তর রাঙ্গামালিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই ব্যাপারী বলেন ,খিদিরপুর গ্রামের জহির কৃষক আব্দুর রহমানের জমির পাশে মাটি কাটছে। সে কারণে আব্দুর রহমানের জমি ভাঙন দেখা দিয়েছে। তার জমি ভেঙে গেলেই আমার ১৪০ শতাংশ জমি ভাঙন ধরবে। এতে করে আমার ফসল ফলানো বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া ইছামতী নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানানোর কারণে আমাদের ধানি জমিগুলোতে পানি দিতে পারছি না।
আমার মতো শতাধিক কৃষকের ধানের জমিতে পানি দিতে পারছে না। এতে করে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এখন ধান গাছগুলো রোদে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। তাই এখনই প্রশাসনের মাটিকাটা বন্ধ এবং বাঁধ খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
খিদিরপর গ্রামের কৃষক মো.মিজানুর রহমান বলেন, আমি প্রায় ২ একর জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছি। যা জোয়ারের পানি আমাদের জমিতে দিতে হয়। কিন্তু কয়েকদিন ধরে ইছামতী নদীতে বাধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে ফেলেছে। এতে আমাদের জমিগুলোতে সেচ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে আমার জমির ধান গাছ গুলো শুকিয়ে গিয়ে মরে যাওয়ার উপদ্রব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই দ্রুত ইছামতী নদী থেকে বাধটি অপসারণ করে পানি চলাচল সচল করে দিবে প্রশাসন এটাই আমাদের দাবি।
খিদিরপর গ্রামের মো.আহসানুল বলেন, আমার ফুফাতো ভাই বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী মো. সামাদের সাড়ে ১০ শতাংশ জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নিয়ে গেছে জহির। এই জমির উপরেই সামাদের সংসার চালিয়ে থাকেন। মাটি কাটার ফলে সামাদ এখন একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। এই জহিরের বিরুদ্ধে প্রশাসন যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক জানান, আওয়ামীলীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের জমি তার ছোট ভাই লতব্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরমান হোসেন মাটি বিক্রি করেছে জহিরুল হক জহিরের কাছে। এতে নদীতে বাঁধ এবং পাশের জমি ভাঙন দেখা দিয়েছে।
তারা আরো জানান, কৃষি কাজই তাদের প্রধান পেশা। এ কাজ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু মাটি খেকো ইটভাটার মালিক জহির
কৃষকদের এ রুটি রুজিতে আঘাত করছে। এরা যে ভাবে কৃষি জমি নষ্ট করছে, তাতে কিছুদিন পর আর জমি খোঁজে পাবে না। প্রশাসন যদি এখনই কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে তাদের ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত জহিরুল হক জহির নদীতে বাঁধ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি নদীতে কোন বাঁধ দেইনি। এবার আমি কোনো মাটিও কেটে ইটভাটায় আনছি না। এবার শুধু নিজের ইটভাটা নিয়ে বসে আছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, উত্তর রাঙ্গামালিয়া গ্রামের কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় ইছামতী নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করার বিষয়টি কৃষকরা আমাকে জানিয়েছে। আমি এ বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি, তারা দ্রুত বাঁধ খুলে দিবে বলে জানিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার বলেন,ইছামতী নদীর উপরে বাঁধ দিয়ে কৃষি জমির পানি চলাচল বন্ধ করা এবং কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি সোমবার রাতে কৃষি কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছে। আমি আমাদের স্থানীয় নায়েবকে বলেছি, তারা যেন সরেজমিনে দেখে আমাকে জানায়, আমি দ্রুত ওই বাধ খুলে দিব এবং যারা ফসলি জমির মাটি কাটছে তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মানবকণ্ঠ/এসআর
Comments