Image description

বরিশালে সাবেক দুই মন্ত্রীর বাসভবনসহ চার স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা। বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে এসব ভবন এবং স্থাপনায় বুলডোজার চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা।

গুড়িয়ে দেয়া স্থাপনাগুলো হলো শেখ হাসিনার ফুফা সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের কালিবাড়ির রোডস্থ বাস ভবন, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমুর বগুড়া রোডস্থ বাসভবন, ঢাকা বরিশাল মহাসড়কে সাবেক মেয়র সেনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মাতা আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহানারা বেগমের নামে নির্মিত পার্ক এবং বরিশাল প্রেসক্লাবের সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য।

জানা গেছে, বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে ওই ভাঙচুর শুরু করেন। রাতভর দুটি বুলডোজার চালিয়ে  স্থাপনাগুলির প্রধান ফটক, দেয়ালসহ বেশির ভাগ অংশ ভেঙে ফেলা হয়। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কালীবাড়ি রোডে সেরনিয়াবাত ভবনের সামনে ভিড় জমান। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা একটি বুলডোজার নিয়ে এলেও সেনাবাহিনীর সদস্যদের বাধার মুখে তাঁরা বুলডোজার ব্যবহার করতে পারেননি। এর আধা ঘণ্টা পর বুলডোজার দিয়ে সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন ভাঙা শুরু হয়। রাত দেড়টার দিকে বাসভবন ঘিরে ভাঙচুরের একপর্যায়ে বুলডোজার দিয়ে নিচতলার একাংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনতলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে রাত দুইটার দিকে বরিশাল নগরের বগুড়া রোডে আমির হোসেন আমুর বাসভবন বুলডোজার চালিয়ে ভাঙা শুরু হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীরা তিনতলা বাড়ির একতলার নিচের অংশবিশেষ ভেঙেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বরিশাল প্রেসক্লাবের প্রধান ফটকের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যটিও হাতুড়ি আর ভারী বস্তু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। বিকালের দিকে ছাত্র-জনতা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের চৌমাথায় এলাকায় সড়ক দখল করে গড়ে উঠা শিশু পার্কটিও বুলডোজার দিয়ে একটা অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়। সড়ক ও জনপদের জমিতে সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ সিটি করপোরেশনে অর্থে তার মায়ের নামে পার্কটি করেছিলেন।

ভাঙচুরের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে উৎসুক মানুষের ভিড় ছিল। তাঁদের অধিকাংশই মুঠোফোনে ছবি, ভিডিও ও সেলফি তুলে মুহূর্তটাকে ক্যামেরাবন্দি করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে দুটি বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনের রাস্তায় উৎসুক মানুষের ভিড়। অনেকেই ভেঙে দেওয়া বাড়ির রড খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ভাঙ্গা বাড়ির সামনে সেলফি তুলছেন। পুরো বাড়ি কেন ভেঙে ফেলা হলো না, সেটা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককে।

গত বছরের ৫ আগস্ট প্রথম দফায় সেরনিয়াবাত ভবনটিতে ছাত্র-জনতা আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। সেদিন বাড়িতে কেউ ছিলেন না। ভবনটির নীচ তলায় দরজা, জানালা থেকে শুরু করে কোনো কিছুই ছিল না। ভাঙচুর ও লুটপাটের পর বাড়িটিতে শুধু ইটপাথরের কাঠামোই অবশিষ্ট ছিল। কেউ যেন ভেতরে প্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য প্রধান ফটকটি তালাবন্ধ ছিল। প্রধান ফটকসহ সবকিছুই রাতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থলে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে তাড়ানোর জন্য ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রাম শুরু করে। ২০২৪ সালে এসে সেটি শেষ হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে হাজার হাজার মানুষকে মেরেছে, তারপরও ন্যূনতম কোনো অনুশোচনা নেই।  

মানবকণ্ঠ/এসআর