Image description

‘বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে স্কাউটিং’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জে ৭ দিনব্যাপী (১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি) সপ্তম জাতীয় কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্প (কমডেকা) অনুষ্ঠিত হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই ক্যাম্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

কমডেকা—একটি বিশেষ রোভার স্কাউটের মিলনমেলা, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা সমাজ সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজ করতে স্থানীয় জনগণের সাথে হাতে হাতে মিলিয়ে কাজ করবে। এবারের কমডেকার থিম রাখা হয়েছে “বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে স্কাউটিং”, যাতে স্কাউটরা শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত হবে। এ ধরনের এক সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে একটি টেকসই সমাজ গড়ার লক্ষ্যেই এই আয়োজন।

৭ম জাতীয় কমডেকায় দেশব্যাপী প্রায় ৫ হাজার স্কাউটার অংশগ্রহণ করবেন, যার মধ্যে প্রায় ৩২০০ রোভার স্কাউট, স্বেচ্ছাসেবক, ইউনিট লিডার এবং কর্মকর্তা থাকবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা একত্রিত হয়ে নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা, ধ্যান-ধারণা ও স্বপ্ন বিনিময় করতে পারবে, বন্ধুত্ব তৈরি করবে এবং নানা ধরনের প্রতিযোগিতা ও চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। তারা নিজেদের দক্ষতা ও নেতৃত্বের গুণাবলি আরও উন্নত করবে, যা তাদের ভবিষ্যত জীবনে কাজে লাগবে।

এবারের কমডেকায় অংশগ্রহণকারীরা কেবল শারীরিক প্রশিক্ষণই নয়, তারা অনেক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা সম্পর্কে জানতে পারবে। কমডেকার অংশ হিসেবে নানা রকম সেবা কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শরীরচর্চা, তাঁবুকলা, ফান অ্যান্ড গেমস, সিডিভি (কমডেকা বিশ্বায়ন গ্রাম), ওয়াটার এক্টিভিটিজ, ক্যারিয়ার প্ল্যানিং, ইয়ূথ পার্লামেন্ট, ফ্রিল্যান্সিংসহ মোট ১৪টি সেবা প্রোগ্রাম। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে রোভার স্কাউটরা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং একে অপরের সাথে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের মাধ্যমে নতুন পৃথিবী গড়ার জন্য প্রস্তুত হবে।

এছাড়া, ৬টি স্মৃতির সিঁড়ির আয়োজন করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘টপ অ্যাচিভারস গ্যাদারিং’, ‘গণ অভ্যুত্থান সন্ধ্যা’, ‘ভলান্টিয়ারস নাইট’, এবং ‘গার্ল-ইন-স্কাউটিং এর ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন’। এসব স্মৃতি সৃষ্টির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা অতীতের গৌরবময় মুহূর্তগুলোকে স্মরণ করবে এবং তাদের উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, বাংলাদেশের স্কাউট আন্দোলন কখনোই শুধুমাত্র একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী নয়, বরং এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শহীদ স্কাউটদের আত্মত্যাগ আজও আমাদের স্মরণে। শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ অন্য ৭ শহীদ স্কাউটের আত্মদান স্কাউটদের মধ্যে উদ্বুদ্ধতার এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের আত্মত্যাগ আমাদেরকে শেখায়, সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য সকল প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করতে হবে। শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই কমডেকায় নানা কার্যক্রমও পরিচালিত হবে।

৭ম জাতীয় কমডেকা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি ছাত্রজীবনে একজন সক্রিয় স্কাউট ছিলেন এবং স্কাউটিংয়ের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। তার “থ্রি জিরো” তত্ত্ব—শূন্য দারিদ্র, শূন্য বেকারত্ব, শূন্য কার্বন নিঃসরণ—এর প্রচারে এই কমডেকা ভূমিকা রাখবে। ড. ইউনূসের দিকনির্দেশনায়, রোভার স্কাউটরা এ বছরের কমডেকায় বাংলাদেশের জন্য একটি সুস্থ, টেকসই ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে উৎসাহিত হবে।

বাংলাদেশ স্কাউটস এর এডহক কমিটির সম্মানিত আহ্বায়ক ও সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোমো. এহসানুল হক, এডহক কমিটির সদস্য সচিব মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলামসহ অন্যান্য সদস্যরা সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

এটি শুধু একটি স্কাউটিং কার্যক্রম নয়, এটি বাংলাদেশ স্কাউটস এর মাধ্যমে একটি নতুন ধরনের সমাজ তৈরির প্রক্রিয়া। স্কাউটরা এমন এক যুবশক্তি যা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শান্তির জন্য কাজ করবে এবং তাদের মধ্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা গড়ে উঠবে যা দেশ ও সমাজের ভবিষ্যৎ আলোকিত করবে।

মানবকণ্ঠ/আরআই