মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী ব্যক্তির নামে ইবি’তে হলের নাম পরিবর্তন, সমালোচনার ঝড়

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শেখ পরিবারের নামে থাকা বিভিন্ন আবাসিক হল ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা স্থাপনা-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রেরিত পত্র মোতাবেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা স্থাপনা-প্রতিষ্ঠানের নাম গত ২৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৭তম (সাধারণ) সভার ৬ নং প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবর্তন করা হল।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেখ হাসিনা হল ‘এখন জুলাই’, ৩৬ হল, শেখ রাসেল হল ‘এখন শহীদ আনাছ হল’, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এখন ‘শাহ আজিজুর রহমান হল’, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল এখন ‘উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হল’ এবং ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন এখন থেকে ‘ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবন’ নামে পরিচিত হবে।
তবে প্রজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে শাহ আজিজুর রহমানের নামে নামকরণের সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। যুদ্ধের সময় তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আবদুল মোতালেব মালিকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্য হন এবং রাজস্বমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি পাকিস্তান কর্তৃক জাতিসংঘে প্রেরিত প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি জাতিসংঘে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফুয়াদ হাসান লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের নামে কোন হলের নাম পরিবর্তন হতে পারে না। আর কোন নাম কি খুঁজে পাওয়া গেলো না? ২৪ আমার ঠিকানা, ৭১ আমার অস্তিত্ব।
সাবেক শিক্ষার্থী জি কে সাদিক লিখেছেন, শাহ আজিজুর রহমান একজন চিহ্নিত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানি সৈন্যদের গণহ*ত্যার পক্ষে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই লোক মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের গণহত্যার পক্ষে কাজ করে গেছে। তার নামে আবাসিক হল, জুলাই অভ্যুত্থানের যে চেতনা সেটাও বিরুদ্ধে যায়। ইবি প্রশাসনের কতিপয় ‘গাঁধার’ এমন সিদ্ধান্ত এদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের বুলেটে-বেয়োনেটে প্রাণ হারানো বাংলাদেশের প্রত্যেক শহীদের আত্মার অপমান। ‘জুতা নিক্ষেপ করে’ এমন কর্মের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। ইবির ভিসিসহ অন্যান্য পদগুলোতে কি ৭১-এর গণহত্যার পক্ষ শক্তি বসে আছে? না থাকলে একজন গণহত্যাকারীর নামে আবাসিক হলের নাম হয় কি করে? সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এর নিন্দা জানিয়ে রাখলাম। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে নিজ হাতে এই নাম মুছে ফেলবো।
এ বিষয়ে ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, শেখ পরিবারের নামে থাকা স্থাপনা গুলোর নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে আমাদের প্রস্তাবনা ছিল তবে শাহ আজিজুর রহমানের নাম আমাদের প্রস্তাবনায় ছিল না। হলের নাম যে এই নামে নামকরণ করা হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগতও ছিলাম না। একাত্তরকে নিয়ে একটি পক্ষ সবসময়ই চেতনা ব্যবসা করে গেছে। আমরা চাই না যে একাত্তরকে নিয়ে আবারও এধরনের কিছু হোক।
Comments