
দেশব্যাপী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অনলাইনে হেনস্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সোমবার (১০ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কের পাশে মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
এ সময় তারা নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে কার্যকর আইন বাস্তবায়ন, প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেত্রী মৌসুমি বলেন, “বিগত কয়েক দিন ধরে পুরো বাংলাদেশে নারীরা যেভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন, তা আমাদের কখনোই কাম্য ছিল না। বাংলাদেশের নারীরা সব সময়ই সচেতন ছিলেন এবং সব ধরনের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। তাছাড়া, জুলাইয়ের আন্দোলনে প্রথম কাতার থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আজকে নিজের দেশেই তারা অনিরাপদ, যা কখনোই কাম্য নয়। নারীরা যেন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি জায়গায় নিরাপদ থাকেন, সেটাই আমাদের দাবি।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বৈশাখী স্নেহা বলেন, “গত ৮ মার্চ নারী দিবসে সরকারের উপদেষ্টা মণ্ডলী এসি রুমে বসে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। সেই ৮ মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত পত্রিকা খুললে দেখা যাবে ২০টির বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১০টি শিশু। উপদেষ্টাগণ যখন এসি রুমে বসে আলোচনা করেন, তখন আমাদের নিরাপত্তা কে নিশ্চিত করবে? গতকাল আমাদের আইনমন্ত্রী একটি আইন পাস করেছেন। আমি জানতে চাই, গত ৭-৮ মাসে অনেক আইন পাস হয়েছে, কিন্তু এসব আইনের বাস্তবায়ন কোথায়?
তিনি আরও বলেন, ২০০০ সালে যখন আমাদের দেশে এসিড হামলা বেড়ে গিয়েছিল, তখন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে তা নির্মূল করেন। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে আমরা কী করছি? আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি, আর আমি বলতে চাই, এটি শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আন্দোলন নয়, এটি পুরো দেশের আন্দোলন। নারী যদি নিরাপদ না থাকে, দেশ কীভাবে এগোবে? আমরা দেখছি, ৫ আগস্টের পর থেকে অনলাইনে ‘আল বটর বাহিনী’ আমাদের বোনদের হেনস্তা করে আসছে। এর বিরুদ্ধে কয়জন মুখ খুলেছেন? অনলাইন হ্যারাসমেন্ট, ইভটিজিং, ক্যাটকলিং ধর্ষক তৈরির প্রক্রিয়া। আমরা সবাইকে বলতে চাই, নারী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট আমল থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, যার ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের নারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের পুরুষ সহপাঠীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছেন। অথচ আমরা দেখছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৬ মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি করতে পারেনি। দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ মাগুরায় যে নৃশংস ও নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে এই নরপশুদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক।”
Comments