
যাই যাই করে ২৩ তারিখে পৌঁছেছে চৈত্র মাস। চৈত্রের শেষের দিকে এসে দেশজুড়ে বইছে দাবদাহ। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। অসহনীয় এ গরমের প্রভাব পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষদের জীবনে। হঠাৎ চৈত্রের বিদায়বেলায় খরতাপে এই চৈত্রের তেজ টের পাচ্ছেন তারা!
গেল কদিনে চৈত্রের কাঠফাটা রোদে মাঠ, ঘাট, পথ, খাল, বিল, প্রান্তর ফেটে চৌচির। উত্তপ্ত সূর্য যখন দুপুরে মাঝ আকাশে আসে, সেসময় রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরে। চৈত্রের শেষেও আকাশে মেঘ নেই। আছে সূর্যের চোখ রাঙানি। প্রখর রোদকে সঙ্গী করে সকাল শুরু হচ্ছে। ভরদুপুরে তেতে উঠছে সূর্য। শেষ বিকেলেও রোদের তেজ কমছে না। ফলে খেটে খাওয়া মানুষদের চৈত্র মাস বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তার কেমন তেজ। তপ্ত রোদে খাঁ খাঁ করছে চারপাশ, এরমাঝেই কর্মজীবী মানুষের কাজ চলছে। একটু শীতল অনুভূতির জন্য মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা।
গেল কদিনের তুলনায় আজ দুপুর থেকে তেমন খাঁ খাঁ রোদ লক্ষ্য করা যায়নি। তবুও রয়েছে গরম। বিগত কয়েকদিনে গরম ছিল আজকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। সেই গরমে নিজেদের কাজ করতে গিয়ে জ্বলেছে শরীর, আর ঝরেছে শরীরের ঘাম- এমনভাবেই অসহনীয় তীব্র গরমের বর্ণনা দিয়ে নিজেদের ভোগান্তির কথা মানবকণ্ঠের প্রতিবেদকের কাছে জানিয়েছেন খেয়ে খাওয়া বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
তাদের মধ্যে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মানুষের বাসাবাড়ি থেকে ময়লা ভ্যানে করে সেগুলো এসটিএসে পৌঁছে দেওয়াই আমার কাজ। তবে গত কিছুদিনের তীব্র গরমে নিজের কাজ ছেড়েই পালাতে ইচ্ছে হয়েছিল। এত গরম, পুরো শরীর দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে, ঘামতে ঘামতে শরীর দুর্বল হয়ে নেতিয়ে পড়েছে। তবুও ঘাড়ের সঙ্গে রাবার বেঁধে ময়লা বোঝাই ভ্যান মাইলের পর মাইল টেনে নিয়ে গেছি। খুব কষ্ট হয়েছে এই কদিন। ঈদ পরবর্তী মাস হাতে টাকা নেই। তবে খরচ আছে আগের মতোই, তাই এই তীব্র গরমের মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছি। নিজের শরীর কষ্ট পেয়েছে তবুও কাজ করে যেতে হয়েছে।
রাজধানীর মিরপুর পল্লবী এলাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছিলেন হীরা মিয়া। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ হলেও তিনি রাজধানীতেই নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। আলাপকালে হীরা মিয়া বলেন, আমার অন্য সহকর্মীরা ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছেড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চলে গেছে। ঈদ ঢাকাতেই করতে হয়েছে। অন্য সহকর্মীরা এলে আমি দেশে বাড়ি যাব। তাই বেশি টাকার প্রয়োজন।যে কারণে আমি এখনো রাজধানীতে থেকে গিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। তবে রোজার মাসে কাজ করা কঠিন হলেও গত কয়েকদিনে অতিরিক্ত গরমে শরীর পুড়ে গেছে। তবুও কাজ করে যেতে হয়েছে, আজও কাজ করছি। তবে আজ গত কয়েক দিনের তুলনায় গরম একটু বেশি। আমরা যারা এই তপ্ত রোদের মধ্যে শ্রমিকের কাজ করেছি তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি, গরম, রোদে কীভাবে শরীর পুড়ে যায়। এর মধ্যে কাজ করা কতটা কঠিন।
ভ্যানচালক নাজিম উদ্দিন। গুলিস্তান থেকে ভ্যানে মালামাল নিয়ে মগবাজার পর্যন্ত এসেছেন। এদিকে গরমে তার শার্ট ভিজে জবুথবু হয়ে আছে। গোটা শরীর বেয়ে ঘাম মাটিতে পড়ছে। এই অবস্থায় গরমের তীব্রতা নিয়ে কথা হয় নাজিম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, আজ গরম একটু বেশি। শরীর ঘেমে পুরো গোসল হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে জীবন নেতিয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অতিরিক্ত গরমের কারণে খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করেছি। আমরাই শুধু বুঝেছি চৈত্রের এই ভয়াবহ গরমের তেজ কতটা।
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের তিন বিভাগ ও ছয় জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ঢাকায় তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। অন্যদিকে দেশের সাত বিভাগেই বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, ফেনী, মৌলভীবাজার, বরিশাল এবং পটুয়াখালী জেলাসহ রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরণের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে একই সময়ে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টিসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
সোমবারের (৭ এপ্রিল) পূর্বাভাস বলছে, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেফল্য আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এদিন সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বৃষ্টি হতে পারে উত্তরাঞ্চলে। পূর্বাভাস বলছে ওইদিন রংপুর বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেখলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে বাড়তে পারে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা।
বুধবারও (৯ এপ্রিল) রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সে সময়ও সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংয়, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
Comments