Image description

বাংলাদেশসহ ৭৫টির বেশি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চীনের পণ্যের ওপর নতুন করে আরও ২১ শতাংশ বাড়িয়ে শুল্ক ১২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরো বিশ্বের সঙ্গে লড়াইয়ে না গিয়ে চীন বনাম আমেরিকা যুদ্ধেই মনোনিবেশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বুধবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্ট দেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, ‘চীন বিশ্বের বাজারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধার যে ঘাটতি দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ধার্য করছি। এটা তাৎক্ষণিক কার্যকর হবে।’

ট্রাম্প লিখেছেন, ‘৭৫টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এসব প্রতিনিধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ, অর্থ বিভাগ ও ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) রয়েছে। দেশগুলো বাণিজ্য, বাণিজ্য বাধা, শুল্ক, মুদ্রার মানে কারসাজি ও অশুল্ক বাধাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছে।’

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২ এপ্রিল চীনা পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর জবাবে ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে একই পরিমাণ শুল্কারোপ করে চীন। দেশটির এমন পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হন ট্রাম্প। এটি প্রত্যাহার না করলে, আরও ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। 

তবে চীন অনড় থাকে। ফলে বুধবার থেকে দেশটির ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে চীনা পণ্যে শুল্ক বেড়ে দাঁড়ায় ১০৪ শতাংশে। তবে এবারও ছাড় দেয়নি বেইজিং। মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ করে। 
এটি বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছে চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্ককে নিপীড়নমূলক আখ্যা দিয়ে, এর জবাবে বাড়তি শুল্ক ধরা হয়েছে বলে জানায় তারা। 

এমন অবস্থার মধ্যে চীনকে সতর্ক বার্তা দিয়ে হোয়াইট হাউস। এক বার্তায় হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘প্রতিশোধ নেবেন না, তাহলে আপনি ভালো থাকবেন।’

বিশ্লেষকদের মতে, প্রথম আমলের অসমাপ্ত কাজই সম্পন্ন করতে চাইছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেছেন, তখন আমাদের সঠিক কাজ করার সময় ছিল না। তবে আমরা এখন তা করছি।

বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক আরোপের লক্ষ্য হলো চীনকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার পতন। 

২০১২ সাল থেকে চীনের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপরই চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে রোলস রয়েস, জেনারেল মোটরস এবং ভক্সওয়াগেন-এর জন্য বিশ্বের বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছিল।

ধারণা করা হচ্ছিল, চীন আরও ধনী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জনগণ রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি করতে শুরু করবে। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষাগুলোর মধ্যে প্রথমটি কখনই ঘটেনি। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা ধরে রেখেছে।

আর চীন এখনও কেবল রপ্তানির উপর নির্ভরশীল নয়, বরং প্রকাশ্যে আরও বেশি প্রভাবশালী হওয়ার পরিকল্পনা করছে। ২০১৫ সালে চীনের  মেড ইন চায়না-২০২৫ নামের জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসে। এর এক বছর পরই ক্ষমতায় আসেন ট্রাম্প।  তিনি প্রথম মেয়াদে বাণিজ্য যুদ্ধের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করেন।  ঐকমত্যকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। তাঁর উত্তরসূরি জো বাইডেনও চীনের ওপর তাঁর বেশিরভাগ শুল্ক বজায় রেখেছিলেন।

যদিও এসব বিষয় নিঃসন্দেহে চীনকে কিছুটা যন্ত্রণা দিয়েছে তবে এতে চীনা অর্থনৈতিক মডেল পরিবর্তন হয়নি। 

চীন এখন বিশ্বের ৬০ শতাংশ বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন করে। এগুলো একটি বড় অনুপাত তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড দ্বারা তৈরি। এখন ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরে এসে চীনের সেই মডেলই ভেঙে দিতে চাইছেন।  

বেশ কয়েকদিন ধরে, রিপাবলিকান এবং ব্যবসায়িক কর্মকর্তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে অতিরিক্ত শুল্ক বন্ধ করার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল নতুন শুল্ক আরোপের কারণে হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী মন্দা তৈরি করবে।  তবে এরপরও ট্রাম্প বলেছেন, আমার নীতি কখনও পরিবর্তন হবে না।

মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, আর্থিক বাজারের দরপতন নিয়ে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগই একমাত্র কারণ যা ট্রাম্পকে শুল্ক স্থগিত করতে বাধ্য করেছে।  যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এ নিয়ে ট্রাম্পের কাছে উদ্বেগের কথা জানায়। 

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ট্রাম্পের কাছে উদ্বেগগুলো উত্থাপন করেছিলেন, যখন হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা তাকে মার্কিন ট্রেজারি বাজারে ত্বরান্বিত বিক্রয় সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। 

এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, আর্থিক বাজারটা খুবই জটিল, আমি এটা দেখছিলাম। এখনকার আর্থিক বাজার সুন্দর। কিন্তু হ্যাঁ, গত রাতে দেখলাম মানুষ একটু অস্বস্তিতে ভুগছিল।  

তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিনহুয়া, ব্লুমবার্গ, সিএনএন