
ছয় দফা দাবির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীরা। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সারা দেশে একযোগে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে গণমিছিল করবেন তারা।
সরকারি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টিএসসিসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ফেসবুক বার্তায় ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৬ দফা দাবি আদায়ে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আহ্বান জানিয়েছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান কার্যনিবাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী জানান, বৈঠকের পরেও দাবির বিষয়ে সন্তোষজনক সাড়া ও সিদ্ধান্ত না আসায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সারা বাংলাদেশের সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বাদ জুমা একযোগে ‘৮৭ এর কাফন আন্দোলন’ এর ন্যায় কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে গণ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সারা দেশে রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে কর্মসূচি শিথিল করে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে যায় কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের আঠারো সদস্যের প্রতিনিধি দল। তবে শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের অনুপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠক শেষে জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, আমাদের আন্দোলন ৮ মাস ধরে চলছে। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে জনদুর্ভোগ তৈরি করছি না। আমাদের বাধ্য করা হয়েছে। আমরা সচিবালয়ে যাওয়ার পরেও এর সমাধান করা হয়নি। আমাদের সঙ্গে সরাসরি প্রতারণা করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি:
১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত। নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল সহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিক ভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) এর পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং। হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ। এবং সকল গুন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে " কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়" নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইন্সটিটিউট হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) এ পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
Comments