Image description

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'মোন্থা'র প্রভাবে সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলায় মোট ৪০৭ হেক্টর জমিতে রোপা আমনসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৮১ জন কৃষক। অসময়ের টানা বৃষ্টিতে মাঠে নুয়ে পড়েছে ধান। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার কৃষকরা জমির পাকা ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় টানা বৃষ্টির পানিতে ধান ডুবে গেছে। নিচু জমির অধিকাংশ রোপা আমন ক্ষেতে পানি জমে ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক মাঠে ধান গাছ একেবারে মাটিতে নুয়ে পড়েছে, যা কাটা ও শুকানো প্রায় অসম্ভব।

শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭৬ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন, ৫ হাজার ২০০ হেক্টরে মাসকালাই, দুই হাজার ৩৮৬ হেক্টরে শাক-সবজি, ৪৯৩ হেক্টরে মরিচ, ৫০০ হেক্টরে সরিষা, এক হাজার ১ হেক্টরে খেসারী, ৮৭ হেক্টরে গোল আলু ও ৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মন্থার প্রভাবে গত ২৪ ঘন্টায় ২৩৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন, ৩৫ হেক্টরে মাসকালাই, ৭৪ হেক্টরে শাক-সবজি, ৮ হেক্টরে মরিচ, ৩৮ হেক্টরে সরিষা, ১৩ হেক্টরে খেসারী, দুই হেক্টরে গোল আলু ও এক হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

জেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু আউয়াল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, জেলায় এবার রোপা আমন চাষ হয়েছে ৭৬ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে। মাঠেই বিনা ১৭, ব্রি ধান ৭৫, ব্রি ধান ৯০, স্বর্ণা ৫ ও নতুন জাত ব্রি ধান ১০৩ রোপণ করা হয়েছে। নতুন জাতের ধানে তুলনামূলক ভালো ফলনের আশা করা হলেও হঠাৎ বৃষ্টিতে সেই আশায় ধাক্কা লেগেছে। অথচ আর ক'দিন পরেই ধান ঘরে তুলতো কৃষক। এখন নিচু এলাকায় ধান গাছ শিকড়সহ পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ধানে বাদামি ঘাসফড়িংয়ের কীটনাশক ছিটাতে।

রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষক বাদশা সেখ বলেন, "আর ক'দিন পরেই দুই বিঘা জমির ধান ঘরে তুলতাম। কিন্তু রাতের বৃষ্টিতে আমার দুই বিঘা জমির ধান একেবারে লুটিয়ে পড়েছে। এখন কাটা সম্ভব না, ধান কালো হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি আর এমন চললে পুরো ফসল শেষ হয়ে যাবে।"

কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে সার, বীজ ও শ্রমের উচ্চমূল্যের কারণে আগেই ব্যয় বেড়েছে। এখন বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হলে লোকসান সামাল দেওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। একদিকে রোপা আমনের ক্ষতি, অন্যদিকে জমিতে জমে থাকা পানি শুকাতে সময় লাগবে। আবহাওয়া অনুকূলে না এলে জেলার সামগ্রিক ধান উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, "ঘূর্ণিঝড় 'মোন্থা'র প্রভাবে এ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আগামীকাল রোববার থেকে এ বৃষ্টিপাত কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।"