গত দেড় বছর ধরে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা হয় দেশের বাইরে, না হয় কারাগারে অবস্থান করছেন। নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে দলটির কার্যক্রম। সেই আওয়ামী লীগ হুট করে ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করায় নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসন। কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভারতে বসে প্রথমে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিলেন এবং তারপর পরই ১৩ নভেম্বর ‘লকডাউন’ ডাকলেন। এ দিন তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন একটি মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ হওয়া কথা।
রাজনীতিবিদ ও রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের কর্মসূচি পালনে খুব বেশি প্রভাব না পড়লেও আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা বাড়বে। তবে জ্বালাও- পোড়াও করে এখন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সমর্থন পাওয়া যাবে না। আর গত তিন দিনে যেখানে-সেখানে ককটেল বিস্ফোরণ এবং আগুনের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবার মনে প্রশ্ন আসলে ১৩ নভেম্বর কী হতে যাচ্ছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি স্বাভাবিক দিনের তুলনায় অনেক কম দেখা গেছে। সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ১ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ও গত দুই দিনে ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা দায়ের ও ৫০ জন গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, গত সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ১২টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ি এলাকায় আলম পরিবহন নামে একটি বাসে আগুনের ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় এক হেলপারের মৃত্যু হয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে আগুন দেওয়ার প্রেক্ষাপটে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বুধবার (১২ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে বিজিবির দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
কখন কোথায় ককটেল বিস্ফারণ হচ্ছে, আগুনে পুড়ে যাচ্ছে বাস, সেই শঙ্কায় গত দুদিন ধরেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। তারা বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত চান। কারণ তারা জেনেছেন, রাজধানীতে যখন-তখন ককটেল বিস্ফারণ ঘটছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসও। বুধবার (১২ নভেম্বর) প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জরুরি ক্লাস অনলাইনে করার কথা জানিয়ে দেয়। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো ছুটির নোটিশ পাঠিয়ে দেয়। যদিও সরকারি কোনও স্কুলে এ ধরনের কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি। এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অনলাইনে ক্লাস বাতিল করার নোটিশ জারি করা হয়।
গাড়ি কোথায় রাখবো সেই চিন্তাতেই দুইদিন কোথাও যেতে পারছি না উল্লেখ করে নাম প্রকাশ না করে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আমার গাড়ি আমি নিজে চালাই। আমাদের এখানে বেশিরভাগ জায়গায় পার্কিং নাই, রাস্তায় বাধ্য হয়ে গাড়ি রাখতে হয়। এখানে-সেখানে আগুন লাগাতে দেখে ভয়েই মরে যাচ্ছি। গাড়ি কোথায় রাখবো, আর কী দুর্ঘটনা ঘটবে কে জানে। তাই দুদিন হলো মেট্রোতে যাতায়াত করছি।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান এটাকে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা জাগানোর প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত যা যা ঘটছে এসব চাইলে ঘটানো যায়। আপনি অর্থ বরাদ্দ দিয়ে, লোক ভাড়া করে এসব করাতে পারবেন। ২০১৩-১৪ সালের দিকে আওয়ামী লীগ সরকার শক্ত অবস্থায় থাকার পরেও অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবিলা করতে পেরেছিল, থামাতে পেরেছিল? আওয়ামী লীগ আসলে তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করতে চাইছে। কারণ, এক বছরেরও বেশি হলো তারা কোথাও নেই। শেখ হাসিনার যে বক্তৃতা, সাক্ষাৎকারগুলো সাম্প্রতিক দেখা যাচ্ছে-সেখানেও এই ‘দেখিয়ে দেওয়ার’ বিষয়টা আছে।’’




Comments