গত শুক্রবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অবনতি হলেও রোববার কিছুটা উন্নতি হয়। এদিন তিনি চিকিৎসক, স্বজনদের সঙ্গে দু-একটি কথাও বলেন বলেও তথ্য পাওয়া যায়। তবে একদিন পরেই তাঁর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে আবার উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন তিনি। গতকাল সোমবার সকালে হঠাৎ তাঁর অবস্থার কিছুটা অবনতি হয় বলে জানান চিকিৎসকরা।
গতকাল একাধিক দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন। সন্ধ্যায় মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা। ৬টার দিকে চিকিৎসক দলের জরুরি সিদ্ধান্তে খালেদা জিয়ার ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়।
রাত ১০টায় মেডিকেল বোর্ডের বৈঠক শেষ হয়েছে। বোর্ডের একজন সদস্য জানান, কিছু জটিলতার কারণ খুঁজতে খালেদা জিয়ার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল আছে।
হাসপাতাল এলাকার নিরাপত্তাও বাড়িয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রাতে ডিএমপি কমিশনার হাসপাতাল এলাকা পরিদর্শন করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করে টুইট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইট বার্তায় তিনি সব ধরনের সহায়তার আগ্রহ জানান।
বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা জানতে সোমবার দুপুরে ও সন্ধ্যায় কথা হয় তিনজন চিকিৎসকের সঙ্গে। তাদের একজন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জানান, চীনসহ দু-তিনটি দেশ থেকে আসা কয়েকজন চিকিৎসক খালেদা জিয়ার জন্য গঠন করা মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকে অংশ নেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন জনস হপকিনস হসপিটালের চিকিৎসক, লন্ডন থেকে লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরা। লন্ডন থেকে তারেক রহমান ও পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানও বৈঠকে অংশ নেন। ঘণ্টা দুয়েক চলে এ বৈঠক।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ডায়ালাইসিস চলছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা দিতে চীনের পাঁচ সদস্যের চিকিৎসক দল এসেছে। গতকাল দুপুরে তারা হাসপাতালে যান। সন্ধ্যায় তারা মেডিকেল বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সহায়তার জন্য চীনের পাঁচ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছেছে। মূল চিকিৎসক দল মঙ্গলবার (আজ) পৌঁছাবে।
দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল, যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস হাসপাতালের চিকিৎসক এবং লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে। চীনের চিকিৎসকরাও এতে যুক্ত হয়েছেন।
হাসপাতালে বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান, ছোট পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ভাই শামীম এস্কান্দার ও তাঁর সহধর্মিণী কানিজ ফাতিমা সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়া এখন অত্যন্ত অসুস্থ। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের যুক্ত রেখে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
গতকাল দুপুরের দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান। কিন্তু তিনি দেখতে পারেননি। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত রোববার রাত থেকে খালেদা জিয়া খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে চলে গেছেন। বর্তমানে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছেন।
আহমেদ আজম খানের এ বক্তব্যে উদ্বেগ আরও ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক বার্তায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সংবাদ তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বক্তব্য ছাড়া অন্য কোনো সূত্র বা কারও বক্তব্য ব্যবহার না করার আহ্বান জানানো হয়।
খালেদা জিয়া ‘সিসিইউতে আগের মতোই চিকিৎসাধীন’ জানিয়ে তাঁর চিকিৎসা নিয়ে কারও বক্তব্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানান ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
এ ছাড়া বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে খালেদা জিয়াকে নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, এটা সঠিক নয়। কেউ এতে বিভ্রান্ত হবেন না।
প্রায় ৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৩ নভেম্বর রাতে তাঁকে রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।




Comments