Image description

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ জনপদে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে নতুন ধান কাটার মায়াময় সুবাস। উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের মাঠ এখন সোনালি রঙে রাঙা ধানের শীষ দুলছে হালকা শীতের বাতাসে। বিশেষ করে সুগন্ধি আতব ধানের সমারোহ যেন কৃষকের ঘরে নতুন স্বপ্নের বার্তা নিয়ে এসেছে। আতব ধান ঘরে তুলতেই জীবনের হাসি ফুটে ওঠে এমন বাস্তবতা প্রতিফলিত হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকদের চোখে-মুখে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাজিপুর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৬টি গ্রামে চলতি মৌসুমে প্রায় ৬,৭৫০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি আতব ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রিধান-৩৪ ও চিনি আতব এই দুই জাতের আমন ধান সবচেয়ে বেশি রোপণ করেছেন কৃষকরা। বিঘা প্রতি গড়ে ১২ থেকে ১৪ মণ ফলন পাওয়ার তথ্য মাঠপর্যায়ে পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে উপজেলার নাটুয়ারপাড়া, চর গিরিশ, মাইজবাড়ি, চর গিরি, নাটুয়ারচরসহ বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠে আতব ধানের সবুজ-সোনালি ছটায় ভরা মনোরম দৃশ্য দেখা গেছে। এ এলাকার মাটি প্রাকৃতিকভাবে সুগন্ধি ধান চাষের উপযোগী হওয়ায় বহু বছর ধরেই চাষিরা অন্যান্য ধানের তুলনায় আতব ধানকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কৃষকরা বলছেন, এই ধানের চাহিদা বাজারে বেশি, ফলে লাভও ভালো।

চর গিরিশের কৃষক মো. রহিম (৪০) বলেন, ‘আমি প্রায় ৩ বিঘা জমিতে সুগন্ধি আতব ধান করেছি। এই ধান চাষে খরচ তুলনামূলক কম, আর ফলনও ভালো। বাজারে দাম ভাল থাকলে আমাদের হাসি আরও বাড়বে।’

মাইজবাড়ির কৃষক দুলাল হোসেন জানান, আতব ধান শুধু সুগন্ধি ও স্বাদের কারণে নয়, কম সময়ে ঘরে তোলা যায় ফলশ্রুতিতে কৃষকরা এই ধানের প্রতি ঝুঁকছেন। আউস ধান কাটার পর জমি ফাঁকা না রেখে অনেকে একই জমিতে আতব ধান রোপণ করেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এস. এম. নাসিম হোসেন জানান, ‘আউস ধান কাটার পরপরই আতব ধান চাষ সম্ভব হওয়ায় এ ধানকে লাভজনক মনে করেন কৃষকেরা। অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া সুগন্ধি জাতের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফলে প্রতি বছরই আতব ধানের চাষাবাদ বাড়ছে। ধানের বাজারদর ভালো থাকলে কৃষকের ঘর ভরে উঠবে নতুন আশায়।’

তিনি আরও জানান, আতব ধান বাণিজ্যিকভাবে অন্যতম সম্ভাবনাময় ফসল। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প ও কৃষি বিভাগের সহায়তা পেলে এ অঞ্চলে সুগন্ধি ধানের উৎপাদন আরও বাড়বে।

আতব ধানের স্বাদ, গন্ধ ও গুণগত মানের কারণে দেশব্যাপী এ ধানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ব্রিধান-৩৪ ও চিনি আতব দেশের বাজার, উপহার সামগ্রী, বিয়ে-অনুষ্ঠান ও বিশেষ খাবারে ব্যবহৃত হওয়ায় এর স্থায়ী বাজার তৈরি হয়েছে। কাজিপুরের কৃষকেরাও সেই বাজারের সুযোগ নিতে ক্রমেই এই ধানের দিকে ঝুঁকছেন। স্থানীয় পাইকারি বাজারে বর্তমানে আতব ধানের দাম সাধারণ ধানের চেয়ে ২০০–৩০০ টাকা বেশি, যা কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে।

যদিও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর উৎপাদন ভালো, তারপরও কৃষকেরা সঠিক মূল্য না পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারা চান প্রতিটি ধানের মণ যেন ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হয় এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমে।

কাজিপুর উপজেলার কৃষকরা বিশ্বাস করেন সঠিক বাজারদর পেলে এই ধান তাদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। সোনালি ফসলের এই মৌসুম তাই তাদের জন্য শুধু শস্যের নয়, বরং স্বপ্ন ও আশার প্রতীক।