সৈয়দপুর-রংপুর রুটে ৪ দিন ধরে বন্ধ বাস, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা
টানা চার দিন ধরে সৈয়দপুর, নীলফামারী, এবং দিনাজপুর থেকে রংপুর রুটে গেটলক ও লোকাল বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। শ্রমিক নেতাকে নির্যাতনের প্রতিবাদে এই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাক দিয়েছে নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। ফলে সৈয়দপুসহ জেলার হাজার হাজার যাত্রীকে এখন ভেঙে ভেঙে অটোরিকশা, বিআরটিসি বাস বা বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। এজন্য সময় ক্ষেপণ ও আর্থিক ব্যয় দুটোই বাড়ছে।
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন জরুরি প্রয়োজনে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যাওয়া রোগী, যাত্রী ও শিক্ষার্থীরা। এতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে সৈয়দপুর বাসটার্মিনালে গিয়ে দেখা মেলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের চিত্র। চলাচলে সরকারি বিআরটিসি বাস থাকায় সেটা এখন প্রচুর চাপে। তাছাড়া বেশিভাগ যাত্রীরা অটোরিকশা কনটেক করে চিকলি, তারাগঞ্জ, পাগলাপীর হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাচ্ছেন রংপুরে। আবার অনেক যাত্রীরা রংপুর হতে সৈয়দপুরে আসছেন সেই অটো করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে।
টার্মিনালে অপেক্ষামান রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী সৈয়দপুরের রুমানা, প্রিতি, নুরজাহান, সিনথিয়াসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানান, "আমি প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করি। চারদিন ধরে বাস বন্ধ তাছাড়া বিআরটিসি বাসে উঠতে পারতেছি না প্রচুর চাপ থাকায়। তাই বাধ্য হয়ে অটোরিকশা কনটেক করে কলেজে যেতে হচ্ছে। ভোগান্তি আর দেরি হওয়ায় ক্লাসও মিস হচ্ছে আমাদের। এভাবে আমাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে।
সৈয়দপুরের বাসিন্দা আতিয়ার রহমান (৩৮) জানান, তার অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য রংপুর যাচ্ছিলেন। সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে অপেক্ষারত অবস্থায় তিনি বলেন, "আমার স্ত্রীর জরুরি চেকআপের জন্য ডাক্তারের সিরিয়াল দেওয়া আছে। বাস বন্ধ, এখন অটোরিকশা করে কয়েক যায়গা ভেঙে ভেঙে যেতে হচ্ছে। খরচও বেড়েছে, এই দুর্ভোগ সহ্য করা খুব কষ্টের।"
সৈয়দপুর থেকে রংপুরে ব্যবসার কাজে যাওয়া সোবহান ইসলাম (৪০) বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, "এই রুটে প্রায়ই শ্রমিকদের সমস্যা হয়। সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়। আগে যে পথে এক ঘণ্টায় পৌঁছাতাম, এখন ভেঙে ভেঙে যেতে তিন ঘণ্টারও বেশি লাগছে। এতে আমার মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে এবং ব্যবসারও ক্ষতি হচ্ছে।"
অপর এক নারী যাত্রী জাহানারা বেগম বলেন, "এই সুযোগে অটোরিকশারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছেন। ছোট ছোট গাড়িতে লাগেজ নিয়ে যাওয়া কঠিন। নারীদের জন্য এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং হয়রানি আরও বেশি।"
নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কিশোরগঞ্জের এক শ্রমিক নেতাকে রংপুর বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির কয়েকজন নেতাকর্মী শারীরিকভাবে নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করেছেন।
তিনি বলেন, "শ্রমিক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যতক্ষণ না ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা হচ্ছে, ততক্ষণ রংপুর মালিক সমিতির কোনো বাস নীলফামারীর এই রুটে চলতে দেওয়া হবে না। এভাবে গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাত থেকে এইসব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উভয় জেলার মালিক ও শ্রমিক সমিতির মধ্যে সৃষ্ট এই দ্বন্দ্ব নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। "দুই জেলার মালিক সমিতির মধ্যে সমস্যা হয়েছে। রংপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।"
এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। প্রশাসন ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর আলোচনার মাধ্যমে অচলাবস্থা নিরসনের দিকেই তাকিয়ে আছেন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।




Comments