Image description

দুর্নীতির মামলার আসামিদের নিয়োগ কমিটিতে সদস্য করা, উচ্চ আদালতের নিয়ম অমান্য করে নিয়োগ প্রদানে অনীহা, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও চাকরিতে যোগদানের কাগজাদি যাচাই না করেই নিয়োগদানসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ভুগছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। এ ছাড়াও নিয়োগ নিয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন মহলের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
 
গত কয়েক দিনে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নিয়োগ নিয়ে অব্যবস্থাপনার বেশ কিছু নথি সময়ের আলোর প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এ ছাড়াও অনেকেই রেলওয়ের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার ব্যাপারে বেশ কিছু অভিযোগের কথাও জানিয়েছেন প্রতিবেদককে।
 
রেল সূত্র বলছে, ২০১৮ সালে ২৪৫ জন অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরিরত শ্রমিক উচ্চ আদালতে মামলা করেন চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য। এতে ২০২০ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে এরই মধ্যে অনেকের চাকরি সরকারি হয়েছে। তবে ফাইলবন্দি থাকায় পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের ১৬৩ জন শ্রমিকের চাকরি স্থায়ী হয়নি এখনও।
 
প্রায় ১৪ বছর ধরে মালির পদে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে চাকরি করছেন মো. আল-আমিন। ১৬৩ জন রিটকারীদের মধ্যে তিনিও একজন। গত ছয় মাস ধরে বেতন পাননি। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ফান্ডে টাকা নেই। অথচ উচ্চ আদালত থেকে যোগদানের আদেশপ্রাপ্তির পরও এখন পর্যন্ত তার নাম ওঠেনি সরকারি চাকরের খাতায়। জানতে চাইলে আল-আমিন বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আমরা রায় পাই। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আমাদের সব কাগজপত্র, ভাইভা ও রেজাল্ট জমা পড়ে। এরপর থেকে সেসব এখনও ফাইলবন্দি। স্যারদের কাছে গেলে তারা বলেন আজ হবে, কাল হবে। এক স্যারের কাছে গেলে তিনি আরেক স্যারের কাছে পাঠান।
 
অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলওয়েতে নিয়োগবহির্ভূত ও জাল সনদে চাকরি করেছেন এমনকি জাল সনদে চাকরি শেষে অবসরেও গেছেন রেলওয়ের একজন ড্রাইভার। বিভিন্ন সময়ে দফতরের কর্তাব্যক্তিদের সামাল দিয়ে অনেকে চাকরি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। আবার চাকরি দেওয়ার কথা বলে রবীন্দ্রনাথ ঘোষসহ অনেকের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নামে।
 
এ নিয়ে আদালতে মামলার পর দোষী সাব্যস্তও হয়েছেন মামুন নামে রেলওয়ে হাসপাতালের এক নৈশপ্রহরী। ওই মামলায় কারাগারে থাকাকালীন সময়কে ছুটি দেখিয়ে ভোগ করেছেন মাসের বেতনও। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় এমন অব্যবস্থাপনা নিয়েই চলছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই রেলওয়ের কোনো কর্তাব্যক্তির।
 
জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে বলতে পারব। তবে চাকরি প্রাপ্তির বিষয়ে আদালতের কাছ থেকে কয়েকটি আদেশ এসেছে; তাতে অনেকেরই নাম ঠিক নেই, মামলা নম্বর ও কনটেম্পেটের ঠিক নেই। আদালতের রায় হওয়ার আগেই ১৭ জন রায়ের ভুয়া আদেশ নিয়ে এসেছিল। পরে তা যাচাই করে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
 
আর বাকিরা যারা সঠিক আছেন এবং চাকরির আশায় এখনও ঘুরছেন তাদের ব্যাপারে কি বলবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে জিএম বলেন, তারা ঘুরছে ঘুরুক। তাতে কি হয়েছে। তারা একই দলের লোক। এরপর জাল সনদ নিয়ে কে বা কারা চাকরি করেছেন এমন কোনো অভিযোগ তার জানা নেই বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
 
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা নিয়োগ দুর্নীতি মামলার আসামি হলেন পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মোহা. আশাবুল ইসলাম। ২০১৮ সালে ১৮৫ জন সিপাহি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি সামনে এলে সম্প্রতি ২৪ জন এসআই ও এএসআই নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক পদ থেকে তাকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতির মামলায় আলোচিত হওয়ার পর বর্তমান নিয়োগবিষয়ক আহ্বায়ক কমিটি যাতে বাতিল করা না হয় সে জন্য তারা গোপনে তদবির চালাচ্ছেন।
 
তবে দুর্নীতির মামলায় আসামি হওয়ার পরও চিফ কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলামকে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক করার বিষয়ে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (ডিজি) মো. কামরুল আহসানকে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।