Image description

হিজরি মাসগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ ও মহিমান্বিত মাস হলো রজব। এটি আরবি বর্ষপঞ্জির সপ্তম মাস। রজব শব্দের অর্থ হলো "সম্মান করা।" ইসলামে রজব মাসকে চারটি পবিত্র মাসের একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি। তার মধ্যে চারটি মাস (সম্মানিত হওয়ার কারণে) নিষিদ্ধ। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।” (সূরা তওবা: আয়াত ৩৬)। তাই রজব মাস অত্যন্ত সম্মানিত ও ফজিলতপূর্ণ।

অন্যদিকে পবিত্র হাদিস শরিফে রজবের প্রথম রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সুসংবাদ এসেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন আছে, যেগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না, অর্থাৎ অবশ্যই কবুল করেন। রাতগুলো হলো—জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯২৭)।

এমনকি জাহেলিয়ার যুগের আরবরাও এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায় অধিক সম্মান করতেন। এজন্য তারা এ মাসের নাম রেখেছিল ‘রজব’। আবার রজব ও শাবান মাস পবিত্র রমজানের আগমনি বার্তা বহন করে। যেহেতু এ মাস রমজানের আগমনি বার্তা নিয়ে আসে তাই এই রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ মাস আসলেই নবিজি (সা.) রমজানকে স্বাগত জানিয়ে বেশি বেশি দোয়া করতেন। 

হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, যখন রজব মাস শুরু হতো, নবি করিম (সা.) তখন এ দোয়াটি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়াবাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন।’ (আলমুজামুল আওসাত, হাদিস : ৩৯৩৯)।

রজব মাসের আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেশি বেশি নফল রোজা পালন করা। মাসজুড়ে প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা-এর নিয়মিত আমল- সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করা। তাছাড়া মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজা পালন করা। মাসজুড়ে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত-দোহা, জাওয়াল, আউয়াবিন, তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ ইত্যাদি নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই জরুরি।

হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলেকে (সা.) রজব ও শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখেছি, রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি।

তবে আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, ২৭ রজবে রোজা রাখা অনেক ফজিলত। এমনকি অনেকের মধ্যে এ বিশ্বাস রয়েছে যে এই একটি রোজার ফজিলত এক হাজার রোজার সমান। এ জন্য তাকে হাজারি রোজা বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এ রোজার ব্যাপারে সহিহ ও গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা নেই। আল্লামা ইবনুল জাওজি, হাফেজ জাহাবি, তাহের পাটনি, আবদুল হাই লখনবি (রহ.) প্রমুখ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এ রোজার ফজিলতকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলেছেন। (কিতাবুল মাওদুয়াত, ইবনুল জাওজি : ২/২০৮, তালখিসুল মাওদুয়াত, পৃষ্ঠা ২০৯, তাজকিরাতুল মাওজুয়াত, পৃষ্ঠা ১১৬, আল আসারুল মারুপা, পৃষ্ঠা ৫৮)।

আবার এ মাসে পশু জবাই করে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগে রজব মাসে মুশরিকদের মধ্যে স্বীয় দেবতা বা প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার একটি রেওয়াজ ছিল। একে ‘আতিরা’ বলা হতো। রাসুল (সা.) এই প্রথার মূলোৎপাটন করেছেন। স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘ইসলামে ‘ফারা’ (উট বা বকরির প্রথম বাচ্চা প্রতিমার উদ্দেশ্যে)জবাই করার কোনো প্রথা নেই এবং ‘আতিরা’ও নেই। অর্থাৎ রজব মাসে প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার প্রথাও নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪৭৩)।

মানবকণ্ঠ/এসআর