Image description

ছয় বছর বয়সী শিশু শওকত রাফি। খেলার সাথীদের সঙ্গে অন্য খেলার চেয়ে ফুটবল খেলতে বেশি পছন্দ করে। টিভিতে ক্রিকেট খেলার তুলনায় ফুটবল খেলা দেখার আগ্রহ তার। আর্জেন্টাইন ফুটবলার মেসি তার পছন্দের খেলোয়াড়। তবে নেইমার, রোনালদো, এমাপ্পের খেলাও তার ভালো লাগে। বাবার সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন মাঠে ফুটবল খেলাতে যায়। 

গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) গ্রামে নারী ফুটবল খেলা হবে। বাবা ব্যাবসায়ীক কাজে ব্যস্ত তাই তাকে নিয়ে খেলা দেখতে যেতে পারবে না। সকাল থেকে মায়ের কাছে বায়না ধরেছে তাকে মাঠে খেলা দেখাতে নিয়ে যেতে হবে। ছেলের বায়না মিটাতে মা রিক্তা পারভিন ছেলেকে নিয়ে মাঠে যান। বিকেল তিনটায় মাঠের এক পাশে বসে পড়ে মা-ছেলে খেলা দেখতে।

মাইকে ধারাভাষ্যকারের ঘোষণা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে রংপুর বিভাগ নারী ফুটবল একাদশ বনাম দিনাজপুর জেলা নারী ফুটবল একাদশ প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। ঘোষণা চলাকালে মাঠের অপরপ্রান্তে হাট্টগোল শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগে মুহূর্তেই শুরু হয় ভাঙচুর-মারামারি। সবাই এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। এ সময় মা রিক্তা পারভিন তার ছেলে রাফিকে নিয়ে বাড়ির দিকে দৌড়াতে থাকে। এ সময় কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী মা-ছেলেকে মরতে থাকে। এদের মধ্যে একজন বলতে থাকে, ওর ছেলেকে মার তা হলে মায়ের শিক্ষা হবে। এই বলে ছেলের হাতে লাঠি দিয়ে দুইটা আঘাত করে। এতে মা-ছেলে জানে বেঁচে ফিরলেও শিশু রাফির হাত ভেঙে বাঁকা হয়ে যায়।

নিরাপত্তার কথা ভেবে পাশ্ববর্তী ঘোড়াঘাট উপজেলার এক চিকিৎসককের কাছে চিকিৎসা শুরু করেন। হাতে এক্স-রে দেখে ডাক্তার জানান, শিশুর রাফির হাতের দুটি স্থানে ভেঙে গেছে। রাফি উপজেলার বাওনা গ্রামের আবু সুফিয়ান রিক্তা পারভীন দম্পতির ছেলে। 

গত মঙ্গলবার দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার বাওনা গ্রামে নারী ফুটবল প্রীতি ম্যাচকে কেন্দ্র তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভকারী ও ফুটবল ম্যাচ আয়োজকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় প্রশাসন আপাতত খেলা স্থগিত ঘোষণা করেছে।

এদিকে, হামলার ঘটনা দুইদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তৌহিদী জনতার ব্যানারে কারা হামলা চালিয়েছে তা এখনো প্রশাসন শনাক্ত করতে পারেনি। এ বিষয়ে কোন পক্ষ মামলাও করেনি। তবে প্রশাসনের ভাষ্য হালাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

আয়োজক কমিটি বাওনা ছাত্র কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, খেলাটি ডিসি ও থানার ওসির কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল। খেলা শুরুর মুহূর্তে এলাকার তাবলীগ জামায়াত ও কওমী মাদরাসার কিছু ছাত্র-শিক্ষক হামলা চালিয়েছে। এতে তাদের ১৭ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জনের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে সেলাই করতে হয়েছে। তাদের প্যান্ডেল, সাইন্ড সিস্টেম ও ডেকোরেটর সামগ্রীসহ সব মিলিয়ে অন্তত ৪ লাখ টাকা ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, নিরাপত্তার কথা ভেবে মামলা করতে সাহস পাচ্ছি না। প্রশাসনও উল্টো আমাদেরকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।

হাকিমপুর ঘোড়াঘাট থানা সার্কেল সহকারি পুলিশ সুপার আ ন ম নিয়ামত উল্লাহ জানান, উপজেলার বাওনা গ্রামে নারী ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এমন আশঙ্কার প্রেক্ষিতে খেলাটি বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক মৌখিক নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশের প্রেক্ষিতে ওই স্থানে গিয়ে দুটি পক্ষের উত্তেজনা দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর থাকা সত্ত্বেও কিছু লোক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তৌহিদী জনতা করা শনাক্ত করা কি সম্ভব হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, প্রশাসন জানে তারা করা। তবে এই মুহূর্তে অফিসিয়ালি বলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অমিত রায় জানান,  আপাতত খেলা বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।