Image description

দলবেঁধে ছেলে-বুড়ো সবাই মিলে নদীতে ধরছেন বিভিন্ন দেশি মাছ। বেশিরভাগই মরা মাছ। গত দুই সপ্তাহ ধরে চলছে এই মাছ ধরা। একেকজন ৪-৫ কেজি করে মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সুতাং নদীতে মাছ ধরার এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। পানির রং ঘন কালো। মাছ ধরার সময় কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরে অবস্থিত বিভিন্ন শিল্প কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি এসে সুতাং নদীতে মিশেছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্যে বিষাক্ত এই পানির কারণেই মাছ সব মরে যাচ্ছে।
 
দেখা যায়, পানিতে মরে ভেসে ওঠা মাছের মধ্যে রয়েছে-বাইম, বোয়াল, চিংড়ি, পুঁটি, কাতল, টেংরা, রুইসহ বিভিন্ন দেশি মাছ। বড় বড় মাছ অত্যন্ত দুর্বল হয়ে নদীর পাড়ে এসে ভেসে থাকতেও দেখা গেছে।
 
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুতাং নদীর পানি গত এক দশক ধরে দূষিত হয়ে পড়েছে। পানি দূষণের ফলে মারা যাচ্ছে জলজ প্রাণী ও মাছ। এতে করে মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি পানি দূষণের ফলে পরিবেশ পড়েছে হুমকির মুখে। উপজেলার অলিপুরে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানিসহ অন্যান্য আরও ছোট-মাঝারি কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
 
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় এক দশক ধরে অলিপুরে অবস্থিত প্রাণ-আরএফএলসহ অন্যান্য শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য সুতাং নদীতে ফেলার কারণে চরম দুর্গন্ধ ও কালো কুচকুচে হয়ে পড়েছে নদীর পানি। বিষাক্ত পানিতে টিকে থাকতে না পেরে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে।
 
রাজিউড়া গ্রামের আলাউদ্দিন বলেন, অলিপুরে অবস্থিত প্রাণ কোম্পানির কারখানার বিষাক্ত পানি ভাটিশৈলজুড়া গ্রামের দেগইরা খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুতাং নদীতে পড়ছে। সেই বর্জ্যরে বিষেই নদীর মাছ সব মরে যাচ্ছে। এক কথায় নদীতে এখন আর মাছ নেই।
 
কাটাখালি গ্রামের কলেজছাত্র সামিউর রহমান জানান, নদীর পানি এত বেশি দুর্গন্ধ যে রান্না করার পরও নদীর মাছে গন্ধ থেকে যায়। তবুও লোকজন দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে নেমে মৃত মাছ সংগ্রহ করছে।
 
এ ব্যাপারে বাপা হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, একসময় সুতাং নদীতে সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত। জেলেরা মাছ ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন কল-কারখানার বর্জ্য ফেলতে ফেলতে নদীর পানি এত বিষাক্ত হয়ে গেছে যে, নদীতে মাছ মরে ভেসে ওঠে, জলজ প্রাণী মরে ভেসে ওঠে। শিল্প বর্জ্যরে কারণে নদী পারের মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে গেছে।
 
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক (আরএফএল) জেনারেল ম্যানেজার শেখ জালাল বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তবে সুতাং নদীর কালো পানি উৎস খুঁজতে গিয়ে সরেজমিন দেখেছি, শৈলজুড়া খালের একদম দক্ষিণ দিক থেকে কালো পানি আসছে আর দক্ষিণ দিকে আছে স্কয়ার কোম্পানি। যে খাল দিয়ে কালো পানি প্রবাহিত হচ্ছে সেটি আমাদের কোম্পানির সীমার ভেতরে থাকার কারণে সাধারণ মানুষ মনে করে কালো পানি প্রাণের। কিন্তু নদীর এই কালো পানি আমাদের কোম্পানির নয়।