বন্যার পানি নামলেও কমছেই না দুর্ভোগ, ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন
তিস্তা নদীর পানি বুধবার সকালে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলেও কমেনি বন্যাদুর্গতদের দুর্ভোগ। আমন ধানের ক্ষেত নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, আর নদী ভাঙনের আশঙ্কায় দিন কাটছে অনেকের।
তিস্তার পানি কমলেও দুর্দশা অব্যাহত
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বুধবার সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১.৫০ মিটার, যা বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং উজান থেকে পাহাড়ি ঢল বন্ধ থাকায় তিস্তার পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আপাতত নেই বলে জানান ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারি রাস্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধসহ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া অনেকে বাড়ি ফিরেছেন। তবে, বন্যার ক্ষত কাটিয়ে ওঠা সহজ হচ্ছে না। হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকালে তার বাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও সবজিক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে এবং পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে।
দুর্গতদের কষ্টের শেষ নেই
লালমনিরহাট সদর উপজেলার হরিণচড়া এলাকার ৬৫ বছর বয়সী আকলিমা বেওয়া বলেন, “কষ্টের শ্যাষ নাই। বান হইলেও কষ্ট আর বানের পানি নামি গেইলেও কষ্ট। বাড়ি থাকি পানি নামি গেইছে, তাও কষ্ট আছে। ঘরোত খাবার নাই। এ্যালা নদী ভাঙন শুরু হইবে। যেইকনা জমি আছে, তাকো নদীত ভাঙি যাইবে। বাস্তুভিটাও ভাঙি যাই।”
একইভাবে, কালমাটি গ্রামের শাহিনা বেগম জানান, তাদের ঘরে এখনো বন্যার পানি থাকায় তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর পলিথিন মোড়ানো ঝুঁপড়িতে বসবাস করছেন। রোববার রাতে গবাদি পশু ও আসবাবপত্র নিয়ে তারা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ত্রাণ সহায়তা ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, তিস্তাপাড়ের বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় কারো বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেলে পুনর্বাসনে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
নদী ভাঙনের আশঙ্কা
বন্যার পানি কমলেও নতুন করে নদী ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক কৃষক ও বাসিন্দা জানান, তিস্তার পানি নামার পর নদী ভাঙন শুরু হলে তাদের অবশিষ্ট জমি ও বাস্তুভিটা হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। এই পরিস্থিতি তাদের দুর্ভোগকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।
বন্যার পানি কমলেও কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত ফসল, ভেসে যাওয়া মাছের পুকুর এবং নদী ভাঙনের আশঙ্কায় উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুর্দশা কাটছে না। সরকারি সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে এই দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো এখন জরুরি।




Comments