Image description

চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে সারা দেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৬১৪টি। একই সময়ে ৩১০টি রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা গেছেন ৭৯ জন। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে সারা দেশে দিনে ১১টি করে খুন হয়েছে। একই সময়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায় ২ হাজার।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় ভোট ঘিরে নিরাপত্তার আশঙ্কায় বিশ্লেষকরা। জনস্পৃক্ততা বাড়িয়ে সব বাহিনীর সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলার পরামর্শ তাদের। পুলিশ বলছে, বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।

জুলাই অভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে জনরোষে পড়ে পুলিশ বাহিনী। থানায় থানায় হামলা, ভাঙচুর, অস্ত্র লুট, বিতর্কিত সদস্যদের পলায়নের পর ভেঙে পড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এই সুযোগে অপরাধীরাও হয়ে ওঠে বেপরোয়া।
 
আট মাসে বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাও। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, এ সময়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৩১০টি। প্রাণ ঝরেছে ৭৯ জনের।
 
সমতলের পাশাপাশি পাহাড়কেও অশান্ত করার চেষ্টা হয়েছে। সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে গণধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠে পাহাড়। প্রাণ যায় ৩ জনের। আর এতে ভারত ও ফ্যাসিস্টদের ইন্ধন দেখেছে সরকার।
 
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, জাতীয় নির্বাচনের বানচালের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র যেভাবে চলছে; একইভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নাজুক। এ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য ভুলে সহায়তা করতে হবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা অবনতিজনিত ঘটনা দেশে বরাবরই ঘটে। আর এবার বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। কারণ বিগত সরকার পতনের পর নানা কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের মনোবল হারিয়ে ফেলেছে। ট্রমার মধ্যে আছে। তাই নির্বাচনের আগে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা হতে পারে।
 
অপরাধ বিশ্লেষকেরাও বলছেন, লুট হওয়া অস্ত্র জাতীয় নির্বাচনের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে যথেষ্ট। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে সব বাহিনীর সমন্বয়ের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের সম্পৃক্ততাও জরুরি।
 
সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে যারা সমন্বিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে, তারা যদি কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলকভাবে আইনের প্রয়োগ না করেন; তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা কঠিন হবে।

তবে পুলিশ বলছে, নির্বাচন আয়োজনে তারা পুরোপুরি প্রস্তুত। বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন তারা।
 
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে ডিএমপি অফিসার ও ফোর্সদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনের আগেই শেষ হবে প্রশিক্ষণ। এরপর জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো, রাজনৈতিক নেতাদের বসা হবে। যাতে করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকাতে তারা সহায়তা করে।
 
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র ও মব তৈরির বিষয়েও সতর্ক পুলিশ। তবে জনগণই এদের প্রতিরোধ করবে বলে আশা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।