
বহুল আলোচিত জাতীয় জুলাই সনদ স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই আয়োজনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত থাকবেন। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। বেশ কয়েকটি দল প্রস্তাবিত সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কয়েকটি দলের সিদ্ধান্ত এখনো পরিষ্কার নয়।
সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এখনও নির্ধারিত না হলেও সই করতে রাজি বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি দুটি দলই চায়, সনদ স্বাক্ষরের আগে বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রকাশ্যে আনতে হবে। তা করা না হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চলেছে সমঝোতার দৌড়ঝাঁপ। সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
জামায়াত জানিয়েছে, সনদ বাস্তবায়নে নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে অনড় থাকলেও সংস্কারের স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবে। স্বাক্ষর করবে কি না তা অস্পষ্ট।
এনসিপির দাবি, বাস্তবায়ন পদ্ধতির খসড়া, নির্বাচনের আগে গণভোট, সনদের আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা এবং আগামী সংসদকে কনস্টিটুয়েন্ট ক্ষমতা না দিলে তারা সনদ সই অনুষ্ঠানে যাবে না।
রাষ্ট্রীয় সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি। প্রথম পর্যায়ে চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে কমিশনের মোট ৪৪টি বৈঠক হয়। যাতে ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টির বিষয়ে ঐক্য হয়। দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে সংবিধান সংশ্লিষ্ট মৌলিক ১৯টি সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়; যার ১০টিতেই নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
৬টি সংস্কার কমিশনের যে ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ, তার মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে ঐকমত্য কমিশন। জুলাই সনদের পটভূমি ব্যাখ্যা করে সংস্কারযজ্ঞ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরার পর সংস্কারের ৮৪ দফা তুলে ধরা হয়েছে ৪০ পৃষ্ঠার সনদে।
গত ৩১ জুলাই সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরে ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে। ৯ অক্টোবর এই আলোচনা শেষ হয়। আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়।
কিন্তু, বিপত্তি বেধেছে সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, গণভোটের ভিত্তি এবং সময় নিয়ে। ৬টি বৈঠকেও এ বিষয়ে সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি কমিশন।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই জাতীয় সনদের যে চূড়ান্ত কপি পাঠিয়েছে, তার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে অধিকাংশ দলই একমত হলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাবের বিষয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে। জুলাই জাতীয় সনদে সেগুলো যুক্ত করা হয়েছে ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ।
তবে, এই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেই বিষয়ে আলাদা করে কোনো সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়নি জুলাই সনদে। যদিও জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়েই বাস্তবায়ন করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
সনদ স্বাক্ষরের আগে চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছাতে বুধবার সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘অতি জরুরি’ বৈঠক ডাকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যেখানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই কমিশনের প্রধান। তিনি এসময় আশা প্রকাশ করেন, শুক্রবার রাজনৈতিক দলগুলো উৎসবমুখর পরিবেশে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করবে।
এদিকে আজকের আয়োজনে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা ও উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের।
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ বার্তা প্রচার করা হয়েছে।
ওই বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা দেশের সব টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমকে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারের আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের প্রতিটি মানুষকে বলছি- আপনি যেখানেই থাকুন, ঘরে বা পথে, দোকানে, কারখানায়, মাঠে বা খেলাধুলার প্রাঙ্গণে- এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হোন। রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত ভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা সবাই এক ও অভিন্ন জাতি।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এটাই আমাদের একসঙ্গে উদ্যাপনের সময়- ঐক্যের শক্তি অনুভব করার সময়, গর্ব ও আশার এই ঐতিহাসিক দিন থেকে নতুন প্রেরণা পাওয়ার সময়।
Comments