চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ৩৫ বছরের জন্য বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একদল শিক্ষার্থী। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বামপন্থী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের মুরাদ চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু করেন। মিছিলটি ডেইরি গেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আপ আপ সোশ্যালিজম’, ‘ডাউন ডাউন ক্যাপিটালিজম’ এবং ‘মা-মাটি-মোহনা, বিদেশিদের দেব না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে মিছিল শেষে ডেইরি গেটে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’-এর সংগঠক ইমরান হাসান শুভ সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বামপন্থি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।
ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সদস্য সিয়াম মাহমুদ বলেন, বিদেশি শক্তির হাতে বন্দর হস্তান্তর কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি দীর্ঘদিনের জাতীয় স্বার্থবিরোধী আত্মসমর্পণ নীতিরই ধারাবাহিকতা। আওয়ামী সরকারও ক্ষমতার লোভে বা কূটনৈতিক সুবিধার আশায় বহু অসম চুক্তি করেছে; যার সরাসরি বোঝা বইতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।’
তিনি বলেন, ‘বন্দর বিদেশি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে গেলে পরিবহন ব্যয় বাড়বে, স্থানীয় শিল্প প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে, আর মুনাফা চলে যাবে বিদেশে। এতে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জনগণের জীবনযাত্রার মানও নিচে নেমে যায়।’
সংগঠনটির আরেক সদস্য নাজিয়া নাওয়ার বলেন, ‘ইন্টেরিম সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল নির্বাচন আয়োজন। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের দেড় বছর পরও নির্বাচন হয়নি। উল্টো অনির্বাচিত, ম্যান্ডেটবিহীন এ সরকার দেশের সার্বভৌমত্বকে বিদেশি প্রভাবের কাছে বিক্রি করছে; যা নব্য-ঔপনিবেশিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।’
জাহাঙ্গীরনগর ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নিকি জামান বলেন, ‘সরকার যে চুক্তির কথা বলছে, তার সব তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিত ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনালও পাঁচ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর তথ্য প্রকাশ ছিল। কিন্তু এবার ৩০ বছরের চুক্তি, প্রয়োজনে আরও ১৫ বছর বাড়ানোর অপশন এসবই গোপন রাখা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের সহিংসতায় নিহতদের ডিএনএ শনাক্তকরণ যেমন সম্পন্ন হয়নি, আহতদের চিকিৎসাও পুরো হয়নি। অথচ এসব সমাধানের বদলে সরকার বিদেশি শক্তির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে ব্যস্ত। দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’ তাই চুক্তির পূর্ণ বিবরণ জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে এবং পুনর্বিবেচনা করা দাবি জানান তিনি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সজীব আহমেদ জেনিচ বলেন, ‘চুক্তির শর্ত প্রকাশ না করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার অধিকার এই সরকারের নেই। দুর্নীতির অজুহাত দেখালেও চট্টগ্রাম বন্দর সবসময়ই লাভজনক ছিল। সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ম্যান্ডেট দেওয়া হয়নি। অবিলম্বে এ চুক্তি বাতিল করতে হবে।’




Comments