Image description

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন, “আরবি ভাষা ও আরবি কালামের মর্যাদা সর্বজনবিদিত। আমাদের ভাবতে হবে, এই উদযাপনের সঙ্গে আমরা কীভাবে নিজেদের আরও উন্নত মানে নিয়ে যেতে পারি, কীভাবে আরও বেশি শিখতে পারি। আমাদের অনেকেই মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসি। সেখানে মূলত আল-লুগাতুল আরাবিয়্যাহ পড়ানো হয়। কিন্তু শুধু এটুকু জানলেই আধুনিক পত্রিকা, সমসাময়িক বই কিংবা বর্তমান আরব বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বাস্তব পরিস্থিতি পুরোপুরি বোঝা যায় না। তাই আমি মনে করি, আরবি ভাষা শিখতে হলে দুটো দিকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের প্রাচীন আরবি ও আধুনিক ব্যবহারিক আরবি শিখতে হবে।”

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের উদ্যোগে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনে গগণ হরকরা গ্যালারিতে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস–২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানটি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় এবং অধ্যাপক ড. আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়েদুল ইসলাম এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুজ্জামান প্রমুখ।

উপাচার্য আরও বলেন, “আমি আরবি বিভাগকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাতে চাই - শুধু সাহিত্যিক আরবি নয়, সাংবাদিকতার আরবি, ব্যবসায়িক আরবি, এমনকি আইনি ও বাণিজ্যিক আরবিও শিক্ষার্থীদের শেখানোর ব্যবস্থা করুন। কারণ আরব বিশ্বে কোর্টের বাইরে ব্যবসায়িক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য অসংখ্য আরবিট্রেশন সেন্টার রয়েছে। সেখানে কাজ করার জন্য একটি প্রধান শর্ত হলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই আরবি ও ইংরেজি - এই দুই ভাষায় দক্ষ হতে হবে।”

তিনি বলেন, “ইংরেজি অনেকেই জানে, কিন্তু ব্যবসা, আইন ও চুক্তিভিত্তিক আরবি জানে—এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। শুধু আরবি ভাষায় পারদর্শী হলেই চলবে না; আধুনিক কর্মজগতে শিক্ষার্থীরা যেন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, সে অনুযায়ী তাদের গড়ে তোলাও আমাদের দায়িত্ব। এটাই আজকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

আধুনিক আরবি শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত—আধুনিক, ব্যবহারিক ও পেশাভিত্তিক আরবি শেখা। বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথনের জন্য যে আরবি লাগে, ব্যবসায়িক আলোচনা, সাংবাদিক সাক্ষাৎকার বা পেশাগত ইন্টারভিউতে তার চেয়ে ভিন্ন ধরনের আরবি প্রয়োজন হয়। এই ভাষাটাই তোমাদের আয়ত্ত করতে হবে।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, “তোমাদের মধ্যে মেধা আছে, শক্তি আছে, সম্ভাবনা আছে। সেই ট্যালেন্টকে কাজে লাগাও। আধুনিক ও প্রয়োগযোগ্য আরবি শেখার চেষ্টা করো।”

গবেষণার বিষয়ে তিনি বলেন, “আরবি ভাষা ও সাহিত্য পড়লেও আমাদের গবেষণায় সাহিত্যভিত্তিক কাজ তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। যেমন ইংরেজিতে ছোটগল্প, প্রবন্ধ বা গবেষণামূলক লেখা লেখার চর্চা আছে, তেমনি আরবিতেও গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গবেষণাকে আরবি ভাষাতেই করার চেষ্টা করতে হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপাচার্য বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা শিক্ষা ও আরবি সাহিত্যচর্চা বাংলাদেশে একটি আদর্শ ও উচ্চমানের অবস্থানে পৌঁছাবে - এই সম্ভাবনা এখানেই আছে।”

প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে আরবি ভাষা স্বীকৃতি লাভ করে। পরে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালের অক্টোবরে ইউনেস্কোর নির্বাহী পরিষদের ১৯০তম অধিবেশনে ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর দিনটি আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।