শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ২৬ ঘণ্টা পর আগুন নিভল, ৫ কারণে দেরি

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় সাড়ে ২৬ ঘণ্টা পর আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে। রবিবার বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে আগুন নেভানোর কাজ শেষ হয় বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। এই ঘটনায় তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পাশাপাশি আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখবে।
আগুন নেভাতে বিলম্বের ৫ কারণ:
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগার পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে:
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দাহ্য বস্তুর আধিক্য: কার্গো ভিলেজে প্রচুর দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল।
স্টিল স্ট্রাকচারের তাপ শোষণ: ভেতরের স্টিলের কাঠামো তাপ শোষণ করে আগুন ছড়াতে সাহায্য করেছে।
অপরিষ্কার ও গাদাগাদি পরিবেশ: অপরিকল্পিত ও ঘিঞ্জি পরিবেশ আগুন নিয়ন্ত্রণে বাধা দিয়েছে।
অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি: পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না।
ছোট স্টিলের স্ট্রাকচার: ছোট ছোট স্টিলের কাঠামো কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, নাশকতাসহ সব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করা হবে। তিনি বলেন, "আগুন লাগার কারণ তদন্তের ক্ষেত্রে আমরা কোনো কিছুই উড়িয়ে দেব না। যত ধরনের অভিযোগ আছে, প্রতিটি অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চলছে।"
ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এই অগ্নিকাণ্ডকে পরিকল্পিত বলে মনে করছে। তারা একে দেশের অর্থনীতিকে অচল করার "নীলনকশার অংশ" হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ক্ষয়ক্ষতি ও আমদানিকারকদের আহাজারি:
গতকাল সকাল থেকেই অনেক আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট পুড়ে যাওয়া কার্গো ভিলেজের সামনে আহাজারি করেন। তাদের কোটি কোটি টাকার পণ্য আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে।
অ্যাফটেক গ্রুপের প্রায় ২০ কোটি টাকার গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ পুড়ে গেছে।
শাকিল ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড আলভী গ্লোবাল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের পাঁচ কোটি টাকার ল্যাপটপ ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের প্রায় ৭৯ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য পুড়ে গেছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়া থেকে আনা প্রায় ১৮ টনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান জানিয়েছেন, পোশাক তৈরির কাঁচামাল, অ্যাক্সেসরিজ এবং গুরুত্বপূর্ণ নমুনা পণ্য ধ্বংস হয়ে গেছে, যা ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে। তিনি মনে করেন, এই ঘটনা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং বিদেশি ক্রেতাদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ:
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ঢাকা কাস্টম হাউস সাময়িকভাবে যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের এলাকা দিয়ে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করেছে।
সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে আগামী তিন দিন নন-শিডিউল অতিরিক্ত ফ্লাইটের সব খরচ মওকুফ করা হয়েছে।
বিজিএমইএ’র সঙ্গে আলোচনার পর, শিল্পের আমদানি করা কাঁচামাল ৭২ ঘণ্টার স্থলে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে খালাস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং আপাতত আমদানীকৃত কাঁচামালগুলো কার্গো ভিলেজের ৩ নম্বর ভবনে রাখা হবে।
এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটল, যখন মাত্র ছয় দিন আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকভাবে শতভাগ কার্গো নিরাপত্তার স্বীকৃতি লাভ করেছিল।
Comments