Image description

বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকার কারওয়ান বাজারের দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ শুক্রবার নিজেদের নয়তলা ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার একটা বিবরণ দিয়েছে। পত্রিকাটি জানিয়েছে, হামলাকারীরা ভবনের বিভিন্ন অংশে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর রাতের শিফটের কাজে নিয়োজিত ২৮ জন সাংবাদিক ও অফিসকর্মী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তারা প্রাণ বাঁচাতে ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ডেইলি স্টারের এই ২৮ কর্মী ছাদে অবরুদ্ধ ছিলেন।

ডেইলি স্টার জানিয়েছে, হামলাকারীরা ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের শিখা ও কালো ধোঁয়া দ্রুতই পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি আগুন নেভাতে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা বাঁধা দেয়। এতে গাড়িটি পিছু হঁটতে বাধ্য হয় এবং উদ্ধার অভিযান বিলম্বিত হয়।

ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের বিবরণ অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীরা মধ্যরাত থেকে ভোর সাড়ে চারটা পর্যন্ত অফিসের সামনে অবস্থান নেয়। রাত ১২টার দিকে অনুমানিক ১০০-২০০ জনের একটি দল প্রধান গেট ভেঙে ভবনের নিচতলায় ঢুকে পড়ে। তারা আসবাবপত্র, গ্যালারি এবং কাঁচের দরজা ভাঙচুর করে ওপরের তলাগুলোতে উঠে যায় এবং অফিসের সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি কম্পিউটারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলে।

এক পর্যায়ে নিচতলায় থাকা আসবাবপত্র ও সংবাদপত্রের স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই আগুন পরে তৃতীয় তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মধ্যরাতের কিছু সময় পর প্রথমে ৫০-৬০ জনের একটি দল গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করে। আরেকটি দল অফিসের আসবাবপত্র টেনে বাইরে রাস্তার ওপর নিয়ে এসে আগুন ধরিয়ে দেয়।

কার্যালয়ে লুটপাটের একটা বিবরণও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ, বিক্ষোভকারীরা প্রথম থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত প্রবেশ করে আসবাবপত্র ও কম্পিউটার ভাঙচুর করে এবং কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম নিয়ে যায়। অফিসের ক্যান্টিন থেকে খাবারও নিয়ে যাওয়া হয়। ডেইলি স্টারের একজন কর্মী জানান, হামলার সময় তার ক্যামেরা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং হার্ড ড্রাইভ লুট করা হয়েছে।

আগুনের ধোঁয়ায় ছাদে আশ্রয় নেওয়া ডেইলি স্টারের বেশ কয়েকজন কর্মীর শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ধোঁয়ায় ভবন ভরে গেলে রিপোর্টার ও কর্মীরা প্রাণ বাঁচাতে ছাদে চলে যান। সেখানেও তীব্র ধোঁয়ার কারণে অনেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

ভবনের ছাদে আশ্রয় নেওয়া ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানী সাংবাদিক জাইমা ইসলাম রাত ১টার দিকে নিজের ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না। প্রচুর ধোঁয়া। আমি ভেতরে আছি। আপনারা আমাকে মেরে ফেলছেন।”

দ্য ডেইলি স্টারের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মাহমুদুল হাসান খান বলেন, “নিচতলা থেকে আগুন ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়লে আমাদের ২৮ জন কর্মী ছাদে আশ্রয় নিয়ে ভেতর থেকে লোহার দরজা বন্ধ করে দেন। আজ ভোর ৫টার দিকে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের সবাইকে উদ্ধার করেন।”

তিনি আরও বলেন, “হামলাকারীরা ব্যাপক ক্ষতি করেছে। তারা নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত যা পেয়েছে তার প্রায় সবকিছুই পুড়িয়ে দিয়েছে এবং ভাঙচুর করেছে। অফিসের কম্পিউটার, টেবিল, চেয়ার, সোফা, ক্যামেরার লেন্সসহ অন্যান্য মালামালও ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে ভবনে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।”

চার ঘণ্টাব্যাপী চলা এই হামলা ও বিক্ষোভের সময় পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও তা মূলত ব্যর্থ হয়।

হামলার খবর শুনে ডেইলি স্টারে ছুটে গিয়েছিলেন নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মূখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী, সামান্থা শারমিন, নাহিদ নিভা ও মনিরা শারমিন। এছাড়াও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে ডেইলি স্টার। শুক্রবার সকালে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।