নগরের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা স্কিম (এসএনএস) নামের একটি স্বাস্থ্যবিমা পলিসি চালু হয়েছে। সাজেদা ফাউন্ডেশন ও হারপিকের সহযোগিতায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) রোববার এ কার্যক্রম উদ্বোধন করে।
এই কার্যক্রমের আওতায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ‘এসএনএস সুরক্ষা কার্ড’ দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে তারা ৪ শতাধিক তালিকাভুক্ত হাসপাতালে বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ, ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক সেবার উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাবেন।
এই পলিসি গ্রহণের জন্য একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে বছরে মাত্র ১৯৯ টাকা প্রিমিয়াম দিতে হবে। কোনও গ্রাহক মৃত্যুবরণ করলে এ পলিসির আওতায় তার পরিবার ৩০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, সাজেদা ফাউন্ডেশনের উপ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক এবং অন্য অতিথিরা ডিএনসিসির সদরদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে এসএনএস সুরক্ষা কার্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন।
বর্জ্য ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং তাদের পরিবারের জন্য ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এবং বিমা সেবা প্রদানকারী চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সহযোগিতায় সাজেদা ফাউন্ডেশন ২০২২ সালে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা স্কিমটি গড়ে তোলে। পরবর্তীতে, কর্পোরেট অংশীদার হিসেবে হারপিক এই কর্মসূচিতে যোগ দেয়। ইতোমধ্যে ৫ হাজারের ও বেশি পরিচ্ছন্নতা কর্মী এই স্কিমের আওতায় এসেছেন।
এই স্কিমটি নগরের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় কমাতে এবং কোনও পলিসি গ্রহীতার মৃত্যু হলে তার পরিবারের উপর আর্থিক বোঝা কমাতে সহায়তা করবে।
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এবিএম সামসুল আলম এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন সিটি কর্পোরেশন, সাজেদা ফাউন্ডেশন, হারপিক বাংলাদেশ, এবং চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মোহাম্মদ এজাজ তার বক্তব্যে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়ে বলেন তারা নগর জনস্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, কিন্তু তাদের নিজেদের স্বাস্থ্যসেবা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়।
ডিএনসিসি প্রশাসক আরও বলেন, স্বাস্থ্য বিমা পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় হলেও তারা এর কভারেজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছেন। উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বেতনভুক্ত আড়াই হাজার এবং আউটসোর্সড আরও ৫ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা তাদের সবাইকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনার জন্য প্রচেষ্টা চালাবো।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ডিএনসিসি দেড় হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম প্রদান করছে এবং সাজেদা ফাউন্ডেশন ও হারপিক এক হাজার কর্মীর বিমা প্রিমিয়াম প্রদান করছে। প্রশাসক ডিএনসিসির সকল পরিছন্নতা কর্মীর জন্য এই স্বাস্থ্য সুরক্ষা স্কীম নিয়মিতকরণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
কমডোর এবিএম সামসুল আলম যে সকল এলাকায় পরিছন্নতা কর্মী বসবাস করেন সেখানে আরও বেশি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে বিমা সেবার আওতায় আনা এবং সব প্রতিষ্ঠানে অভিন্ন হারে ডিসকাউন্ট চালু করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে সাজেদা ফাউন্ডেশনের উপ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক বলেন, নগরের নিম্ন আয়ের কর্মীদের, বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত ঘাটতি মেটাতে এই কার্যক্রমটি গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “এই স্বাস্থ্যবিমা পলিসির লক্ষ্য স্বাস্থ্যসেবার জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিজেদের (আউট-অব-পকেট) ব্যয় কমানো এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক কোনও সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা চাওয়াকে উৎসাহিত করা।“
শহরের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য এই সেবা চালু করার মাধ্যমে ডিএনসিসি, সাজেদা ফাউন্ডেশন এবং হারপিক এসব কর্মীদের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং তাদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিশ্চিত করেছে।




Comments