
ঘরে-বাইরে শত অভাব-অনটন। দুঃখ কষ্টকে সাথি করে সারা বছরই রোদ, বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে সংগ্রামী জীবন পাড় করতে হয় চা শ্রমিকদের । তবে বছরের কয়েকটা সময়ে তাঁরা এসব ভুলে যান। পরিবার-পরিজনকে নিয়ে মেতে ওঠেন উৎসবে। এ রকম উৎসবের একটি দোল উৎসব। চা-বাগানে এই দোল উৎসব ফাগুয়া উৎসব নামেই বেশি পরিচিত। শুক্রবার থেকে ফাগুয়া উৎসবের হাওয়া বইছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানগুলোতে। উৎসব চলবে সপ্তাহব্যাপী।
রোববার সরেজমিনে খাইছড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চা বাগানের শ্রমিক কলোনির অলিগলিতে নানান রঙ এর দাগ। ছোট ছোট শিশুরা সারা গা-রঙ মাখিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাতে রঙ নিয়ে ঘুরছে সবাই। বড়রাও বসে নেই। একে অন্যের গায়ে রং মাখিয়ে উৎসবের শুভেচ্ছা দিচ্ছেন সবাই। চা বাগানের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে চা বাগানের ঐতিহ্যবাহী কাঠি নৃত্য পরিবেশন করছে চা কাঠি নৃত্যের দল। রাধাকৃষ্ণ বন্দনায় গুপিরা নানান গানে মাতিয়ে তুলছেন কাঠি নৃত্য।
ভাড়াউড়া চা বাগানের তরুণ কাজল হাজরা বলেন, আমাদের ছোটবেলায় ফাগুয়া আরো বড় পরিসরে হতো। প্রতিটি চা বাগান থেকে দুই টা তিনটা কাঠিনাচের দল বের হতো। চা বাগানে প্রচুর রঙ খেলা হতো। এখন সেটা অনেক কমে গেছে।
শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শারদীয় দুর্গা পূজার পর এটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। ফাগুয়া উৎসবের দিনগুলো চা জনগোষ্ঠীর লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করে। সব মিলিয়ে প্রায় প্রতিটি চা- বাগানেই এক অন্যরকম আবহ বিরাজ করে।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, চা শ্রমিকদের এই সংগ্রামী জীবনে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ফাগুয়া উৎসব। এটি চা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে অন্যতম উৎসব। ফাগুয়া শুরু হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই স্বামীর বাড়ি থেকে মেয়েরা বাপের বাড়ি নাইওরে আসেন। চা-বাগানের ঘরে ঘরে ভালো রান্নাবান্না হয়। অনেক আনন্দ হয়। চা-শ্রমিকেরা সারা বছর বিভিন্ন সমস্যায় ভুগলেও উৎসবের দিনগুলোতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটু ভালো থাকার চেষ্টা করেন।
Comments