রামু তার নিজস্ব ইতিহাস দ্বারাই সমৃদ্ধ। একসময় রামুতে আরাকান রাজাদের রাজত্ব ছিল। রামু আরাকানের একটি প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবেও মর্যাদা লাভ করেছিল। রামুর প্রাচীনত্ব অনেকাংশে নির্ভর করে রাংকুট এলাকার উপর। রাংকুট এলাকাটি রামুর সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে খ্যাত।
এখানে খ্রীষ্টপূর্ব ২৬৮ অব্দে মৌর্যবংশের তৃতীয় সম্রাট অশোক, বুদ্ধের বক্ষাস্থি দিয়ে রাংকুট চৈত্যটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই বুদ্ধবিহারটির নাম রাংকুট থেকে রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ তীর্থস্থান বিহার নামে নামকরণ করা হয়। বিহারটি বনের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় বনাশ্রম আর বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বৌদ্ধের বুকের অস্থি বিম্ব আছে বলে। বৌদ্ধধর্মালম্বীদের পবিত্র স্থান বলে তীর্থস্থান বলা হয়।
আভিধানিক অর্থে রাং অর্থ বুদ্ধের বক্ষাস্থি (বুকের অস্থি) আর কুট অর্থ পর্বত বা চূড়া। অর্থাৎ গৌতম বুদ্ধের বক্ষাস্থির পর্বত। অনেকের কাছে এটি রামকোট বৌদ্ধ বিহার নামেও পরিচিত।
এই বৌদ্ধ তীর্থ ভূমি খ্রীষ্টপূর্ব ৫ম হতে খ্রষ্টীয় ষোড়স শতাব্দীর প্রাচীন বাংলার সুপ্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার এবং এর প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অপরিসীম।
এর প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব শুধু এ অঞ্চলের নয়, বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার। রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ তীর্থস্থান বিহার কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নে সবুজ অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ি অঞ্চলে বিহারটি একটি ছোট টিলার উপর অবস্থিত।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে এখানে। এখানকার ছোট ছোট টিলায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রাচীন ইট, স্তূপ, বুদ্ধমূর্তির ভগ্নাবশেষ, পোড়ামাটির ফলক ও নানা ধরনের প্রাচীন অবকাঠামোর চিহ্ন। এই স্থানটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। রামুতে আরও ৩০টি বৌদ্ধ বিহার থাকলেও এটি বৌদ্ধধর্মালম্বীদের কাছে অধিক গুরত্বপূর্ণ।
তৎসময়ে কক্সবাজার জেলার এ প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ বিহারকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে বৌদ্ধ শিক্ষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির বিকাশও ঘটেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিশ্ব বিখ্যাত সম্রাট অশোকের সম্রাজ্যের সর্ব দক্ষিণ- পূর্ব প্রান্ত সীমায়, যীশু খ্রীষ্ট জন্মের ২৬৮ বছর পূর্বে নির্মিত এই রাংকুট পুরাকীর্তিটি সূদীর্ঘ কাল ধরে স্থানীয় বৌদ্ধদের পূর্ণ্য তীর্থস্থান রূপে বিবেচিত।
এ মহাবিহারের মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় উপাসনারত বুদ্ধের বিম্ব। ফটকের ডানপাশে রয়েছে উপাসনারত ৩৫টি বুদ্ধ বিম্ব আর বামপাশে রয়েছে ৫০টি।
মূল ফটক থেকে কিছুটা সামনে এগোতেই চোখে পড়বে ১৪'শ বছরের পুরনো বটবৃক্ষ। বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু হিউয়েন সাঙ এর ভারত ও বাংলাদেশে বুদ্ধের অবস্থানস্থল আবিষ্কারের সময়ে রোপিত হয় এই বটবৃক্ষটি।
এই বটবৃক্ষের ছায়াতলে রয়েছে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ত্রিপিটক হাতে সম্রাট অশোক মহারাজার ২৩ ফুট উচু প্রতিকৃতি।
এখানকার চোখ জুড়ানো প্রায় ২৩'শ বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপনা, পুরাকীর্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখনো সদ্য নির্মিত নতুন রূপে দন্ডায়মান।
রাংকুট বৌদ্ধ বিহারের উৎপত্তিগত ঐতিহাসিক ইতিহাস :
খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে প্রাচীন আরাকানের ধন্যবতী(ধাঁঈয়াওয়াদি) নগরের সুপ্রসিদ্ধ রাজা মহাচন্দ সুরিয়ার আমন্ত্রণে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি মহা করুণাধার ভগবান গৌতম বুদ্ধ তাঁর স্বশিষ্য বা প্রধান সেবক আনন্দ ভিক্ষুকে সাথে নিয়ে তৎকালীন সমতটের চৈত্যগ্রামের (বর্তমান চট্টগ্রাম) উপর দিয়ে ধন্যবতী নগরে যাওয়ার পথে এই স্থানে বা পর্বতে উপনীত হয়ে ক্ষণিক বিশ্রাম করেছিলেন।
তখন তাঁর প্রধান সেবক আনন্দ ভিক্ষুকে উপলক্ষ করে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, হে প্রিয় আনন্দ! পশ্চিম সমুদ্রের পূর্ব তীরে রম্যবতি (রম্মাওয়াদি) নগরের পর্বত শীর্ষে আমার বক্ষাস্থি স্থাপিত হবে।
আমি যে ৩৫ বছর বয়সে বুদ্ধ হয়ে ৮০ বছর পরমায়ু লাভ করে পরিনির্বাপিত হব, তার মধ্যে ৪৫ বছর ধর্ম প্রচার করব। তা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ৮৪ হাজার ধর্ম বাণীতে রূপান্তরিত হবে। যার নাম হবে ত্রিপিটক। এই ধর্মবাণী প্রচারের পর আমি কুশিনারাতেই পরিনির্বাপিত হব। আমার পরিনির্বাণের সময় সারিপুত্র মৌদগলায়ন এই অগ্রশ্রাবকদ্বয় জীবিত থাকবেনা।
আমার দাহাকার্য সম্পাদন করবে মহাকাশ্যপ স্থবির। আর দাহাকার্যের পরে আমার শরীরের সমস্ত ধাতু (অস্তি) গুলো মহাকাশ্যপ নিজে একটি গুহার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখবে। অতঃপর আমার পরিনির্বাপনের ২৪৯ বছর পর (খ্রিষ্টপূর্ব ৩০৪) এই ধরাধামে এমন একজন মহাপুরুষ জন্ম নিবে সে আমার প্রচারিত ৮৪ হাজার ধর্মবাণীকে সারা বিশ্বে প্রচারের জন্য ৯৬ কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে ৮৫ হাজারটি ধাতু চৈত্য নির্মাণ করবে।
প্রতিটি চৈত্যে আমার শরীরের ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র অংশ প্রতিষ্ঠা করবে। সেই ৮৪ হাজার ধাতু চৈত্যের একটি চৈত্য এই পশ্চিম সমুদ্রের পূর্ব তীরে রম্যবতী (রাওয়াদী) নগরের পর্বত শীর্ষে স্থাপিত হবে। সেই চৈত্যে আমার বক্ষাস্থি প্রতিষ্ঠা করা হবে। তখন ইহার নাম হবে রাংকুট। রাং (বুদ্ধের বুকের অস্থি) কুট-পর্বত বা চূড়া।
অর্থাৎ ৮৪ হাজার চৈত্যের মধ্যে এই রাংকুট চৈত্য একটি অংশ বিশেষ।
প্রিয় আনন্দ, সেই পবিত্র বুদ্ধ বক্ষাস্থি সংযোজিত ধাতু চৈত্য রাংকুটকে দেব মানবেরা পূজা করে প্রভূত পুণ্যের ভাগী হবে এই বলে সেবক আনন্দকে সাথে নিয়ে বার্মায় চলে গেলেন।
বুদ্ধের পরিনির্বাণের (দেহাবসান) ২৩৯ বছর পর পৃথিবীতে জন্ম নিলেন বিন্দুসার রাজার পুত্র সম্রাট অশোক। ২৬১ সালে সংগঠিত কলিঙ্গের যুদ্ধের সময়, যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর ভয়াবহতা দেখে সম্রাট অশোক মর্মাহত হয়ে মানবতাতর সেবায় আত্মনিয়োগ করতে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। সম্রাট অশোক বৌদ্ধ অপ্রমত্ত ধর্মচারী গ্রহণের পর স্বীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বুদ্ধের ভাষিত বাণীগুলোকে পুন:পর্যালোচনার জন্য তৃতীয় বুদ্ধ মহাসম্মেলন করলেন এবং মৌদগলিপুত্ততিষ্য স্থবিরের মাধ্যমে বুদ্ধের দেহের অস্থিগুলো গুহা থেকে বের করে ৯৬ কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে ৮৪ হাজারটি ধাতু চৈত্য প্রতিষ্ঠা করলেন।
সেই ৮৪ হাজার চৈত্যের এই রাংকুট চৈত্যটিও ও একটি অংশ, যা রামুতে খ্রীষ্টপূর্ব ২৬৮ অব্দে ২৩'শ বছর পূর্বে সম্রাট অশোক প্রতিষ্ঠা করেন এবং এটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য অদ্বিতীয়। বেশিরভাগ চৈত্য ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক ও মিশরের মাটির তলে পড়ে রয়েছে।
এই রাংকুট চৈত্যটি প্রতিষ্ঠার পর এখানে অনেক ধ্যানী, জ্ঞানী আধ্যাত্মিক সাধক বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ অবস্থান করেছিলে। ষষ্ঠ শতাব্দীতে যখন এই বিহারে ৭ শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু অবস্থান করতেন তখন আরাকান সামন্ত রাজা চন্দ্রজ্যোতি (চেঁন্দি রাজা) চৈত্যের ভিতর থেকে বুদ্ধের বক্ষাস্থিটি নিয়ে সাদা পাথরের ৬ ফুট উঁচু মনোরম বুদ্ধ বিম্বের মস্তকে সংযোজিত করে বুদ্ধবিম্বটি প্রতিষ্ঠা করেন।
তখন রাজা চেঁন্দি, বুদ্ধ বক্ষাস্থির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে রাংকুট এর পূর্বে বুদ্ধ বক্ষাস্থির প্রতি গৌরব ও সম্মান প্রদর্শন করে "রাং-উ" শব্দটি যোগ করে দেন।(বাংলাভাষায় শ্রদ্ধেয় জনাব এর পরিবর্তে বার্মা ভাষায় "উ" ব্যবহার হয়)। তখন থেকেই এই বৌদ্ধ বিহারের নামকরণ হয় রাং-উ, রাংকুট। এই রাং-উ শব্দটি পরে ভাষান্তর হয়ে "রামু"তে রূপান্তরিত হয়।
চারিদিকে সবুজ গাছ গাছালি বনের মধ্যে আশ্রয়ন বলে বনাশ্রম ও বহু তীর্থযাত্রীর বহু তীর্ণ যাত্রীর পূজাহ বলে তীর্থস্থান এবং হাজার বছরের ঐতিহাসিক বিহার বলে মহাবিহার।
বুদ্ধের বক্ষাস্থি সম্বলিত এই বুদ্ধ বিম্বটিকে মানুষ পূজা ও আরাধনা দ্বারা প্রভূত উপকার ও মঙ্গল সাধিত হয়ে আসছে। তাই সবার কাছে এ বুদ্ধ বিম্বটি "ঋদ্ধিময় বুদ্ধ বিম্ব" হিসাবে সুপরিচিত। এই বুদ্ধবিম্বের বয়সকাল সুদীর্ঘ বছর হওয়ায় আবার অনেকের কাছে এই বুদ্ধ বিম্বটি " বুড়া গোয়াই" (পুরাতন বুদ্ধ) হিসাবে খ্যাত। সপ্তক শতকে বিশ্বখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হুয়েন সাঙ ভারত ও বাংলাদেশের বুদ্ধের অবস্থান যখন পরিদর্শনের সময়ে খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে বিশ্বখ্যাত সম্রাট অশোক কর্তৃক নির্মিত ও ভগবান বুদ্ধের পদধূলিত এই স্থান পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যা তার ভ্রমণ বৃত্তান্তে উল্লেখ আছে।
কালের পরিক্রমায় হাজার বছরের ঐতিহ্য এই বৌদ্ধ বিহারটি বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতে মাটির তলে তলিয়ে গিয়েছিল এবং হারিয়ে ফেলেছিল স্বকীয় ইতিহাস। বিভিন্ন যুদ্ধে বিশেষ করে ধর্মান্ধদের হিংস্র কালোগ্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই অমূল্য সম্পদ বৌদ্ধ বিহারটি। ১৬৬৬ সালে মুঘলদের আক্রমণে বিহারটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরে ১৯৩০ সালে ব্রহ্মদেশীয় ভিক্ষু ও শ্রীলংকান পুরোহিত জগৎচন্দ্র মহাথের শ্রীলঙ্কায় অবস্থানকালে একখানি শিলালিপি উদ্ধার করেন। শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অনুসন্ধান ও খননকার্যের ফলে ১৯২৯ সালের এক শুভক্ষণে বঙ্গীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু জগৎ চন্দ্র মহাস্থবির স্বীয় সাধনায় লব্ধ হয়ে এই পাহাড়ে এসে মাটির ভিতর থেকে ভঙ্গ প্রায় বুদ্ধ বিম্বটি উদ্ধার করেছিলে এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
তখন থেকে পুন: প্রাণ সঞ্চয় হয়েছিল এই বুদ্ধ বিহারটির। সে সময়ে ঋদ্ধিময় বুদ্ধবিম্বটি উদ্ধার হওয়ার পর থেকে অজস্র মানুষ এই বুদ্ধবিম্বটিকে পূজা ও প্রার্থনা করে বহুবিধ উপকৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে দীন-দুঃখী ও কষ্টপ্রাপ্ত মানুষেরা এবং জাতির ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একান্ত শ্রদ্ধা মনে বুদ্ধের কাছে যা প্রার্থনা করে থাকেন তা পূরণ হয়ে আসছে।
জানা যায়, ১৯৬৬ সালের দিকে মন্দিরের সংস্কার করতে গিয়ে প্রজ্ঞাজ্যোতি মহারেথ নামের এক ধর্মসংস্কারক পরবর্তী ২০ বছর এখানে অবস্থান করেন। ১৯৮৮ সালে এক ডাকাত দলের আক্রমণের শিকার হয়ে মহারেথ রাংকূট ত্যাগ করেন।
এই রাংকুট বনাশ্রমের প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপনা ও পুরাকীর্তি দর্শনের জন্য প্রতি বছর প্রচুর তীর্থযাত্রী-পূজারী ও পর্যটকরা এখানে ভীড় জমায়। আশ্রমের পাদদেশে ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইটালীসহ অনেক দেশের আশীর্বাদপুষ্ট ‘‘জগৎ জ্যোতি শিশু সদন’’ নামে একটি বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমালয় রয়েছে। এ আশ্রম নির্মাণকালে রামুর রাখাইন সম্প্রদায়ের শশ্মানে স্থিত এতদঞ্চলে দানবীর প্রয়াত পোওয়েজা: সেজারী (খিজারী দালাল) এর বংশধরদের সমাধিস্তম্ভ ধ্বংস করা হয় বলে রামুর রাখাইনসহ সচেতন রামুবাসীদের আক্ষেপ রয়ে গেছে। আশ্রমে অনেক অনাথ ছেলেমেয়ে রয়েছে তারা বিনা পয়সা এখানে পড়ালেখা করে যাচ্ছে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাংকুটে বসে ‘‘রাজর্ষী’’ উপন্যাসটি রচনা করেন। কবিগুরুই হলদে ফুলের দেশ রামুকে রম্যভূমি হিসেবে সর্বপ্রথম আখ্যায়িত করেন। অবশ্য এককালে বৌদ্ধ সংস্কৃতির পাদপীঠ হিসেবে রম্যভূমি’র নামে বর্তমান রামু প্রসিদ্ধ ছিল।
রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ তীর্থস্থান বিহার এর মহা পরিচালক ভদন্ত কে শ্রী জ্যোতিসেন থের বলেন, রামু রাংকুটে, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বৌদ্ধের ৮৪ হাজার ধর্মবাণীর বুদ্ধের বুকের অস্থি দিয়ে ১টি বৌদ্ধ বিম্ব বা প্যাগোডা ২৩'শ বছর পূর্বে সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন। এটি সমগ্র বাংলাদেশের একমাত্র রামুতে নির্মিত হয়েছিল।
রাংকুটের সূচনালগ্ন থেকে এখনো বিশ্বের লক্ষ লক্ষ বৌদ্ধ ধর্মের ধ্যানী গুনি ও ধর্ম প্রচারকগণ এই পবিত্র রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ তীর্থস্থান বিহারে পূণ্য লাভের উদ্দেশ্যে ধ্যান করতে আসেন। প্রতিদিন প্রায় ৫'শ দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীরাও এ পবিত্র স্থানটি দেখতে ভিড় জমায়।
তিনি আরো বলেন,এখানে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ইত্যাদি স্থানের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এতিম শিশুদের জন্য শিশু আশ্রম ও বৃদ্ধদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। প্রতিবছর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব হিসেবে বৌদ্ধ পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দানোৎসব পালন করা হয়।
তাছাড়াও এখানকার বুদ্ধ হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ। ১৩বছর ধরে রাংকুট বুদ্ধ বিহারের উদ্যোগে সকল সম্প্রদায়ের অসহায় মানুষের জন্য বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প ও রোজার সময়ে মুসলিম সম্প্রদায় মাঝে ইফতার বিতরণ করে থাকে।
ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ তীর্থস্থান বিহারে দর্শনীয় নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে : বিশ্ব ঐতিহাসিক রাং-উ রাংকুট ঋদ্ধিময় বুদ্ধ বিম্ব,
বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ (সুয়ান জাং) এর প্রতিকৃতি, সম্রাট অশোক ভাস্কর্য, মারবিজয়ী অহরত জীবন্দ উপগুপ্ত ভান্দে চৈত্য, ড. বি. আর. আম্বেদকরের ভাস্কর্য (যাকে উনবিংশ শতাব্দীতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের অগ্রদূত বলা হয়), ঐতিহাসিক রাংকুট বুদ্ধ নগর, স্বপ্নে পাওয়া বুদ্ধ মূর্তি, থাইল্যান্ডের শিবলি মূর্তি,প্রতীকী সারনার্থ (বুদ্ধের প্রথম ধর্ম প্রচারের দৃশ্য), ভাবী বুদ্ধ সিদ্ধার্থের জন্ম দৃশ্য,ধর্মীয় বাণীর ও ধর্ম পদের স্মারক স্তম্ভ ,রাংকুট পদ্মবীণা ঝুলন্ত ব্রিজ, ইকো মেডিটেশন পার্ক, পুরাকীর্তি কফি হাউস, রাংকুট তোরক, পাঠাগার শ্রদ্ধার্ঘ, নির্মাধীন ৪০০ মিটার বুদ্ধমূর্তি, মিরাকেল গার্ডেন, বুদ্ধ বাণী ধর্ম পদ, বুদ্ধ বাণী লোকনীতি, ডাক্তার উত্তম মঞ্চ, মাটির তলে ধ্যান গুহা,ইকুরিয়াম, ৮৪ বোদ্ধসহ সীমাঘর, স্মৃতি চৈত্য, ঐতিহাসিক শ্মশান, ব্রিটিশ কেল্লা, মহিলা আসন কেন্দ্র, রাংকুট ঋদ্ধিময় বুদ্ধ, বুদ্ধমূর্তি সংগ্রহ শালা, ধাতু মন্দির, ভোজন শালা, রাংকুট জাদুঘর, ভিক্ষু সংঘের আসন, ২টি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি
উল্লেখিত তথ্যসূত্র :
পাথরের খোদায় করা শিলালিপি যা ১৯৯২ সালে ডাকাত দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত), খ্রীষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে গ্রিক ভাষায় লিখিত - Geography of ptolemy পানি ত্রিপিটকের দাঠাৎবসো গ্রন্থ ১০৮ - ১২২ পৃষ্ঠা, ধাঈয়াওয়াদী গ্রন্থের ৪৬-৪৭ পৃষ্ঠা, সম্রাট অশোক গ্রন্থের ৭৩ পৃষ্ঠা, হিউয়েন সাঙ এর ভ্রমণ ইতিহাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজর্ষী গ্রন্থ, ভুলন্ঠিত সভ্যতা ও ঐতিহ্য ও ইতিহাস সন্ধানে রাংকুট গ্রন্থ।




Comments