১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। আর কয়েকদিন বাকি এ দিনটির। এই দিনটিকে ঘিরে জাতীয় পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তুষার পাল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর রাঙ্গামাটি শহরের বাসিন্দা তুষার পালের জীবন যেন একই সুতোয় গাঁথা। পেশায় তিনি দর্জি, কিন্তু গত ৩০ বছর ধরে তার সুঁই-সুতোয় বোনা হচ্ছে কেবলই লাল-সবুজ পতাকা। এই পতাকাই তার জীবিকা, তার নেশা এবং তার দেশপ্রেম প্রকাশের ভাষা।
জেলার বনরূপা শহরে একটি দোকানে সেলাই মেশিন নিয়ে বসেন তুষার পাল। বছরের বিশেষ দিনগুলো বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস কিংবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলেই তার ব্যস্ততা তুঙ্গে ওঠে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত একটানা চলে পতাকা তৈরির কাজ। তবে উৎসবের দিন ছাড়াও সারা বছরই টুকটাক সেলাইয়ের কাজ চলতে থাকে।
তুষার পাল জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি পুরোদমে পতাকা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। প্রথমে শখের বসেই করতাম। দেখলাম চাহিদা আছে, তাই এটাকে পেশা হিসেবে নিলাম-জানান তুষার পাল। তার কাছে সঠিক মাপ ও রঙের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। তিনি নিশ্চিত করেন যেন প্রতিটি পতাকায় বাংলাদেশের সঠিক মানচিত্র ও আবেগ ফুটে ওঠে।
এই দীর্ঘ তিন দশকে তিনি হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ পতাকা তৈরি করেছেন। তার হাত দিয়ে তৈরি পতাকা উড়েছে জেলার নানা প্রান্তে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, মানুষের বাড়ির ছাদে। আজ তিনি জেলার পরিচিত মুখ। স্থানীয়রা তাকে চেনেন পতাকার কারিগর হিসেবে।
তুষার পালের জীবনের গল্প আর পতাকার গল্প মিলেমিশে একাকার। তার উপার্জনেই চলে সংসার, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা। তিনি গর্ব করে বলেন, এই পতাকা সেলাই করেই আমার জীবন চলছে। দেশের পতাকাকে সম্মান জানিয়ে কাজ করি, এতে মনে শান্তি পাই।
তুষার পাল হয়তো কোনো মুক্তিযোদ্ধা নন, কিন্তু নীরবে নিভৃতে তিনি দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার উপার্জনের উৎস এই পতাকা হলেও, এর প্রতি তার সম্মান ও ভালোবাসা প্রশ্নাতীত।
তিনি আরও বলেন, যতদিন বাঁচব, এই পতাকাই সেলাই করে যাব। আমার জীবনের সেরা ৩০ বছর আমি এই পতাকার সাথেই কাটিয়েছি। এই সুঁই-সুতো আর লাল-সবুজ কাপড় আমার সব।
দেশের প্রতি ভালোবাসা আর জীবিকার তাগিদ, এই দুইয়ের মেলবন্ধন তুষারের জীবনকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। তার কাছে প্রতিটি সেলাই কেবল কাপড় জোড়া লাগানো নয়, বরং দেশের প্রতি গভীর মমতার বহিঃপ্রকাশ।




Comments