যুক্তরাষ্ট্রে কোকেন পাচার ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, এমন অভিযোগে শুক্রবার তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে উত্তেজনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ ক্যারিবীয় অঞ্চলে অভিযান বাড়িয়েছে এবং প্রমাণ ছাড়া বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে, যেগুলোকে তারা মাদকবাহী বলছে। এ নিয়ে ট্রাম্প পেত্রোকে ‘অবৈধ মাদক নেতা’ আখ্যা দিয়েছেন। অপরদিকে, পেত্রো এসব হামলাকে ‘খুনের সমতুল্য’ বলে সমালোচনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘গুস্তাভো পেত্রো ক্ষমতায় আসার পর কলম্বিয়ায় কোকেন উৎপাদন কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক প্রবাহ বেড়েছে এবং অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পেত্রো মাদক কার্টেলগুলোকে বিকশিত হতে দিয়েছেন, থামানোর চেষ্টা করেননি। আজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন।’
তবে পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘আমার সরকার কোকেন উৎপাদন বাড়ায়নি, বরং ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ কোকেন জব্দ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ একেবারেই অযৌক্তিক। আমি নিজেই প্রথম রাজনীতিতে এসেছিলাম মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত রাজনীতিবিদদের মুখোশ উন্মোচন করে।’
পেত্রো জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সম্পদ রাখেন না এবং এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘পুরোপুরি এক প্রহসন’ বলে অভিহিত করেন। তিনি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন নিজের পক্ষে লড়াই করার জন্য।
একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র পেত্রোর স্ত্রী, ছেলে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরমান্দো বেনেদেত্তির ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বেনেদেত্তি এক্স-এ লিখেছেন, তিনি শুধু পেত্রোর পক্ষে কথা বলার কারণেই শাস্তি পেয়েছেন। এটি প্রমাণ করে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবিরোধী লড়াই আসলে এক ভাঁওতাবাজি।’
নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ করা হবে এবং মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন নিষিদ্ধ থাকবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন—পেত্রো যদি অবিলম্বে এই রক্তক্ষয়ী মাঠ বন্ধ না করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রই তা বন্ধ করে দেবে, এবং সেটা সহজভাবে হবে না।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বিরোধ বেড়েছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেন এবং বুধবার দেশটির জন্য সব ধরনের সহায়তা স্থগিত ঘোষণা করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, কলম্বিয়ার মাদকবিরোধী পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দেবে না ওয়াশিংটন। গত মাসে পেত্রোর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল করা হয়—তিনি নিউইয়র্কে এক ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নিয়ে মার্কিন সেনাদের ট্রাম্পের নির্দেশ অমান্য করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের আগের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও পেত্রোর সম্পর্ক জটিল ছিল। তবে দুই নেতা জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন ইস্যুতে সহযোগিতার পথ খুঁজেছিলেন।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার উপদেষ্টা ব্রেট ব্রুয়েন বলেন, ‘পেত্রোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও কলম্বিয়া উপকূলে হামলা চালিয়ে ট্রাম্প শুধু পরিস্থিতি আরও জটিল করছেন। এই ধরনের কাউবয় আচরণ তার সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয় হতে পারে, কিন্তু এটি আমাদের দোরগোড়ায় বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।’




Comments